।। দাঁত কে লিয়ে ।।
দাঁত কে লিয়ে আইয়ে....। ঝাড়খণ্ডের একটা জায়গায় বেড়াতে গেছি। প্রথম দিন বেশ হৈ হৈ করে কাটলেও পরের দিন শুরু হলো দাঁতের ব্যাথা। কখনো টিসটিস কখনো দপদপ নানা রকম অনুভূতি দিয়ে শুরু হয়েছে দাঁতের ব্যাথা। বেড়ানোটাই মাটি হয়ে যাচ্ছে। অগত্যা রাস্তার পাশে ঐ হোর্ডিং দেখে দাঁত কেলিয়ে ঢুকে পড়লাম। মাঝবয়সী একজন সাদা অ্যাপ্রন গায়ে, ডাক্তার বলেই ধরে নিলাম। ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো অবস্থা যা হোক একজন হলেই হলো। উনিই এখন আমার ত্রাতা, আমার মুশকিল আসান। আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চল সখা আমি যে পথ চিনিনা। একটা লম্বাটে চেয়ারে বসিয়ে কাঁটা চামচার মতো দুএকটা যন্ত্রপাতি দিয়ে খোঁচাখুঁচি করে আরও ব্যথা বাড়িয়ে দিলো। ক্যায়া হুয়া জিঞ্জাসা করতেই বলে উঠলো, 'শোচনেকা কুছ নেহি , দো দাঁতমে প্রাবলেম হ্যায়। উঠা দে রহা হু, আধা ঘন্টা লাগেগা'!
'না না আমি এখন দাঁত তোলাবনা' বলেই তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে চলে আসার মতলব করছি। সেটা বুঝতে পেরে বলে ' ঠিক হ্যায়, মেডিসিন দে রহা হুঁ থোড়া আরাম মিলেগা'। সেই ভালো, ওষুধ নিয়ে টাকা মিটিয়ে চলে এলাম। দাঁতের ব্যাথা কমে গেল আবার দাঁত কেলিয়ে হাসতে শুরু করলাম আর মনে মনে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে গালমন্দ করলাম, ব্যাটা আমার দাঁতগুলো তুলেই ফেলছিল।
বছর খানেক আগে আমার শ্বশুর বাড়ির সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে হঠাৎই দেখা। গিন্নির আমার দয়ার শরীর ,আমি মাঝে মাঝে বলি দয়ানন্দ সরস্বতী, অনুরোধ ঠেকাতে পারলনা একদিন বাড়িতে এলেন। সোফায় পাশাপাশি বসে একথা সেকথা নানা রকম গল্প। দাঁতের গল্পও বাদ গেলনা। বেশ কবছর পাইরিয়াতে ভুগছে। একটু চাপ পড়লেই রক্ত, সব দাঁত গুলোতেই কালো ছোপ পড়ে আছে। মুখে প্রচণ্ড দূর্গন্ধ। আশেপাশের লোককে নাকে মুখে হাত দিতে হয়। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোক ভালো দেখায়না বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি হজম করছি। তার বৌ বেচারির কি অবস্থা, সাপের ছুঁচো গেলা গেলাও যায়না আবার উগড়ে দেওয়ার যায়না। শুধু মুখে গন্ধ এই কারণ দেখিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া খুবই কঠিন। বেচারার ভারি কষ্ট দাঁত কেলিয়ে মনের সুখে হাসতেও পারেননা লোকে কি ভাববে।
দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেনা। এসব আমরা সবাই জানি এবং জেনেও মেনে চলার চেষ্টা করিনা। করতে পারলে হয়তো নিজের দাঁতকটা বেঁচে যেতো তবে ঐ দাঁতের ডাক্তার গুলোর কি পরিণতি হতো সেটা ভেবেই দাঁত শিরশির করে ওঠে। তবে নিজের দাঁতের প্রতি যতই যত্মবান হও সময় হলে ওটা এক এক করে যাবেই আর যাওয়ার আগে নিজের অস্তিত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাবে। ছোটবেলায় শোনা সেই ধাঁধাঁটা 'এলাম তো এলোনা, কিছুদিন পরে এলো, আবার চলে গেল, কিছুদিন পরে আবার এলো। আবার চলে গেল.... আর এলোনা'। শুধু এই আসা যাওয়ার মাঝে পড়ে থাকলে হয়তো কোনভাবে মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু তাতো হওয়ার নয়। দাঁতের ডাক্তাররা যত বেশি শিখছে দাঁত নিয়ে আমাদের অপশনও তত বেড়ে চলেছে। এখন দাঁতের ডাক্তারদের বলা হয় ওরাল সার্জন। দাঁতের রোগ নিয়ে গেলে প্রথম পাঠ শুরু হয় কিভাবে কত ডিগ্ৰি অ্যাঙ্গল নিয়ে ব্রাশ করতে হবে, সারাদিনে কখন কবার ব্রাশ করতে হবে। কি রকম ব্রাশ ব্যবহার করা উচিৎ, কোন টুথপেস্ট ভালো এইসব নিয়ে নানারকম অ্যাপলিকেশন করতে হবে। জানিনা বাবা ঞ্জান থেকেই অভ্যাস হয়ে আছে ঘুম থেকে উঠে উনুনের ছাই, নুন তেল, বা আরও একটু এগিয়ে নিমের ডাল, পেয়ারার ডাল। এগুলো দিয়ে বেশ কাজ চলে যাচ্ছিল। তা বললে কি হবে! ওসব এখন ব্যাকডেটেড, শুধু টুথপেস্ট নিয়ে ব্রাশ নয় এখন এসবের সাথে মাউথ ফ্রেশনার মাউথ ওয়াশ ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে দাঁতের অভাবে এখন আর কারো চোয়াল ভেতরে ঢুকে যাওয়ার ভয় নেই। আর কেউ বলবেনা ফোঁকলা বুড়োর গালটি ঢোকা । দাঁতের এখন নানা রকম চিকিৎসা। এক্সট্রাকশন, ডেনচার, ফিলিং, ক্রাউন ও ক্যাপিং, রুট ক্যানাল, বন্ডিং, ব্রেশেস, ভিনিয়ার, ব্রিজেস ও ইমপ্ল্যান্ট আরও কতকি তবে নামও যেমন গালভরা খরচও তেমন পকেট ভরা। একপক্ষের পকেট ফাঁকা অপরপক্ষের পকেট ভরা। দাঁত চেপে রাগ দেখালে ও কোন উপায় নেই। ফেলো কড়ি মাখো তেল আমি কি তোমার পর!
কেউ দাঁত বাঁধাতো খুচড়ো খুঁচড়ো ভাবে, কেউবা গোটা পাটিটাই। সেই আদ্যিকালের দাঁত বাঁধানোয় হাজার ঝামেলা। মোজাফ্ফরপুরের আমার এক মেসোমশাই আমাদের বাড়িতে এসেছিল। রাত্রে খাওয়ার আগে ব্যাগ থেকে ছোট সাইজের একটা প্লাস্টিকের বাটি বের করে বলে 'বৌমা একটু জল দাওতো'। জল দেওয়া হলো তারপর খটাম করে দাঁতের পাটি দুটো খুলে বাটি ভর্তি জলে ডুবিয়ে রেখে দিল। এরপর মেসোমশাই এর গাল দুটো চুপসে আমচুর হয়ে গিয়ে একদম অচেনা লাগছে। আর এক কাকুর দুটো দাঁত বাঁধানো ছিল, ক্লিপ দিয়ে আটকানো থাকতো। একবারতো খুলে গিয়ে ভাতের সঙ্গে গিলেই ফেলেছিল, পড়ে অনেক কষ্ট করে বমি করে বের করা হয়েছিল। একটা নাটক দেখেছিলাম , নামটা এখন মনে পড়েনা, একজন ডাক্তার যার সামনের দুটো দাঁত ছিল বাঁধানো, কথা বলতে গেলেই বেড়িয়ে ছিটকে যেতো। তখন রুগী দেখবে কি 'আমার দাঁত' বলে সেটা খুঁজতেই ব্যস্ত হয়ে উঠতো।
ছোট ছোট থেকেই শুনে এসেছি বেশি চকলেট লজেন্স বা মিষ্টি খেলে দাঁতে পোঁকা হয়। দাঁতের ভেতরে কালো দাগ , শিড়শিড় ব্যাথা এসব হতে থাকলে বলি পোঁকা হয়েছে। এই ধারনাটা অনেক দিন পর্যন্ত বধ্যমুল হয়ে গেছিল। এ ব্যাথা কিযে ব্যাথা বোঝে কি আনজনে.... তখন যা পাই তাই দিয়েই ব্যাথা কমাবার আপ্রাণ চেষ্টা করি। হালকা গরম জল, লবঙ্গ গোঁজা, লবঙ্গের তেল, ফিটকিরি, প্যারাসিটেমল আরও কত কি যাইহোক একটা কিছু দে আর সহ্য করতে পারছিনা। একবার খবর পেলাম পাশের গ্ৰামে একজন মানুষ আছে যে নাকি দাঁতের পোঁকা বের করে ব্যাথা ঠিক করে দেয়। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাসি মুখে হাজির হলাম। আমায় বসতে বলে ভদ্রলোক কোথাও বেড়িয়ে গেলো। যত দেরি হচ্ছে ব্যাথা ততই বেড়ে যাচ্ছে, আধঘণ্টা পরে কোন এক গাছের দুটো পাতা নিয়ে এসে হাঁ করিয়ে একবার দেখে এক কানে বেশ খানিকটা তেল ঢেলে দিল আর এক কানে একটা পাতা দিয়ে চেপে ধরে ঘাড় কাত করতেই ছোট ছোট ছোট বেগুন পোঁকার মতো বেড়িয়ে এলো। যাক বাবা পোঁকা বেরিয়ে গেছে আর চিন্তা নেই। দক্ষিণা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। ব্যাথা কমল কিনা সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার দরকার নেই তবে দাঁতে যে পোঁকা হয়না সেই ঞ্জানটা অনেক দিন পর বুঝতে পেরেছি।
দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটি যে কতরকম ঝামেলা দিতে পারে তার শেষ নেই। খাওয়ার পর খাবারের টুকরো ঢুকে থাকবেই। সেগুলো খুঁটে বের করতে টুথ পিকের বিরাট ভূমিকা, মুখটাকে বেঁকিয়ে ঠিক পজিশনে এনে দাঁত কেলিয়ে নানা রকম ভাবে যতক্ষণ না সেগুলো বেরচ্ছে চেষ্টা করতেই হবে। এক নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। আরও ট্রাজেডি আছে। হাই ব্লডপ্রেশারের জন্য ওষুধ খেতে হয় আর রাত্রে আধখানা করে ঘুমের ওষুধ খেতে হয়।
একবার সেই আধখানা ট্যাবলেট গলার ভেতরে যাওয়ার আগে গিয়ে বিঁধেছে একদম দাঁতের গর্তে। কিছুতেই বের হয়না কুলকুচি করেও বের হচ্ছেনা আর তেঁতোয় মুখটা ভরে উঠছে। একেই বলে না পারি গিলতে না পারি উগলাতে।
মনে মনে ভাবলাম দাঁত কে লিয়ে এবার একটা ডিশিসন নিতেই হবে।
বাঁকুড়ার টেরাকোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের শিল্পকর্মের এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ঘোড়া ও হাতি নির্মাণের প্রধান শিল্প কেন্দ্র গুলি হল পাঁচমুড়া, রাজাগ্রাম, সোনামুখী ও হামিরপুর। প্রত্যেক শিল্পকেন্দ্রের নিজস্ব স্থানীয় ধাঁচ ও শৈলী রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাঁচমুড়ার ঘোড়াগুলিকে চারটি ধাঁচের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে মনে করা হয়। বাঁকুড়ার ঘোড়া এক ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়াও বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী উট , হাতি , গনেশ , নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত মূর্তি তৈরী করে টেরাকোটা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। রাঢ় অঞ্চলে স্থানীয় লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজায় টেরাকোটা ও কাঠের ঘোড়া ব্যবহৃত হয়। অনেক গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে গ্রামবাসীরা ঘোড়া মা...
Comments
Post a Comment