Skip to main content

অপরাজিতা

অপরাজিতা
বহু বৈচিত্রে ভরা অপরাজিতা।  দেবী দূর্গার বিভিন্ন রুপের মধ‍্যে আরও একটি রুপ হল  অপরাজিতা। অপরাজিতা কথার অর্থ অপরাজেয় অর্থাৎ যাকে কেউ পরাজিত করতে পারেনা।   মহর্ষি বেদব‍্যাসের বর্ণনা অনুযায়ী অপরাজিতা দেবীকে আদিকাল থেকেই শ্রেষ্ঠ শক্তিদায়িনী রুপে মান‍্যতা দেওয়া হয়েছে। ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর ছাড়াও অন্যান্য দেবতারা নিয়মিত আরাধনা করেন। বিজয়া দশমী বা দশেহরার সময় শক্তির রুপীনির আর এক প্রতীক হিসেবে কল্পনা করে পুজো করা হয়ে থাকে যাতে জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে যেন জয়ী হ‌ওয়া যায়। অপরাজিতা পুজোর পর সেই লতা হাতে ধারণ করার রীতি অনেক স্থানেই চালু আছে। মানুষের বিশ্বাস এই অপরিজিতা রুপে দেবী দূর্গা সমস্ত অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে ধর্মের পূণঃপ্রতিষ্ঠিত করে। দেবী পূরাণে ও শ্রী শ্রী চন্ডীতে এরকম কাহিনী বর্ণীত হয়েছে।






            ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে এই ফুলের আবিষ্কার যার ব‍্যাপ্তি সুদূর আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা পর্যন্ত। ভারতের মোটামুটি সব স্থান ছাড়াও বিদেশে যেমন ইজিপ্ট, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, ইরাক, আরব, আবগানিস্তানে এই ফুলের গাছ পাওয়া যায়। গ্ৰীষ্ম কাল ছাড়া প্রায় সব সময় এই ফুল ফোটে। বৈজ্ঞানিক নাম Clitoria Ternatea । মহিলার যৌনাঙ্গের আকৃতির সাদৃশ্য থাকায় ল‍্যাটিন শব্দ. Clitoris থেকে  Clitoria ternatea নামটির উৎপত্তি। অপরাজিতা ফুলের রঙ সাধারণত গাঢ় নীল, এছাড়াও সাদা, বেগুনি রঙেও দেখা যায়।
        ভক্তের আকুল আহ্বানের ফলস্বরুপ পৃথিবীর গর্ভ থেকে ঊদ্ভুত হয়েছিল দেবী অপরাজিতা। আট দিকের অধিকর্তা দেবতারা সকলে স্বাগতম জানায় অপরাজেয় এই শক্তিময়ীকে।  সামি গাছ শক্তি সংরক্ষণের সহায়ক । এই কারণে অপরাজিতাকে দেবী দুর্গা রূপে এই গাছের পাশে পূজো করা হয়ে থাকে যাতে দেবী দুর্গার শক্তি এই ভাবে সংরক্ষিত হয়। দেবী অপরাজিতার মধ্যে যুগ যুগ ধরে যে শক্তি সঙ্খরক্ষিত হয়ে আছে তাকে ধারণকারী হিসেবে সামী গাছকে যথাযথ সম্মান দিয়ে গৃহে স্থাপন করা হয়।

 
   জ‍্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী দিপ্রহরের পর অপরাজিতা পুজো করা বিধেয়। দিপ্রহর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়েই অপরাজিতা পুজো করে যে কোন স্থানে যাত্রা করা শ্রেয়। যাত্রা শুরুর আগে যাত্রা কালে যাতে কোন বাধা বিপত্তি না হয় এই শ্লোক জপ করা বিধেয়ঃ

    শৃণুদ্ধং মুনয় সর্বে সর্বকামার্থসিদ্ধিদাম।
    অসিদ্ধসাধিনীং দেবীং বৈষ্ণবীমপরাজিতাম।।
    নীলোত্পলদলশ‍্যামাং ভুজঙ্গভরণোজ্বলাম্।
    বালেন্দুমৌলিসদৃশীং নয়নত্রীতয়ান্বিতাম্।।
    পীনোত্তুঙ্গস্তনীং সাদ্ধীং বদ্ধ্রঞ্জাসনাং শিবাম্।
    অজিতাংচিন্য়েদেবিং বৈষ্ণবীমপরাজিতাম।।
         



          নানা রকম পৌরাণিক বিশেষতা থাকার সাথে সাথে অপরাজিতার ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক গুণাগুণ অপরিমেয়। এই লতার শেকড় মাটির  Rizobia নামক এক ব‍্যাকটেরিয়ার  সঙ্গে মিশে যায় এবং বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে সংশোধিত করে উদ্ভিদ উপযোগী করে তুলতে সাহায্য করে ও মাটির প্রভূত সংস্কার হয়ে থাকে।
           নীল চা (Blue Tea) : আজকের দিনে গ্ৰীন টি উপকারিতা অনেকের‌ই জানা তাই এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তবে এর সাথে ব্লু টি এর উপকারিতাও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অপরাজিতার নীল পাঁপড়ি থেকে তৈরী এই নতুন রকমের  চা স্বাদে ও গন্ধে উপাদেয়। এছাড়াও খাবারের প্রাকৃতিক রঙের কাজে অপরাজিতা ফুলের ব‍্যবহার হয়ে থাকে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন ধরনের খাবারে এর ব‍্যাবহার বহুল প্রচলিত।
            পারম্পরিক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে
নানা ধরনের প্রতিশেধক রুপে যেমন স্মৃতিশক্তি বাড়ান (memory  enhancing), মানসিক চাপ কমানো ( antidepressant), তড়কা  (anticonvulsant), ঘুমের ওষুধ (tranquilizer/ sedative) অপরাজিতার ব‍্যবহৃত হয়। এছাড়াও মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের উত্তেজনা বৃদ্ধিতে এর ব‍্যবহার হয়।
           আরও নিম্নবর্ণিত নানা রকম অসুখে অপরাজিতার উপকারিতা উল্লেখযোগ্য।
       (১) দৃষ্টি শক্তি বাড়ানো ও চোখের নানা চিকিৎসা
       (২) চুল পড়ে যাওয়া ও চুল পাকা
       (৩) চামড়ার মসৃণতা বৃদ্ধি
       (৪) মহিলাদের কামদ্দীপক ও অন্য স্ত্রীরোগ
       (৫) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
       (৬) অস্বাভাবিক প্রস্রাব
       (৭) অ্যানালজেসিক/ ব‍্যাথা উপশম
       (৮) হাঁপানি
       (৯) অ্যান্টিডাইবেটিক
       (১০) ক‍্যানসার/ টিউমার
       (১১) অ্যান্টিকনভালস‍্যান্ট
       (১২) অ্যান্টিপাইরছটিক ও আরও নানাবিধ অসুখ।



Comments

Popular posts from this blog

বাঁকুড়ার টেরাকোটা

                                                                বাঁকুড়ার টেরাকোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা  ভারতের শিল্পকর্মের এক বিশেষ স্থান   অধিকার করে আছে।  বাঁকুড়ার  পোড়ামাটির  ঘোড়া ও হাতি নির্মাণের  প্রধান শিল্প  কেন্দ্র গুলি   হল পাঁচমুড়া,  রাজাগ্রাম, সোনামুখী ও হামিরপুর।  প্রত্যেক শিল্পকেন্দ্রের নিজস্ব স্থানীয় ধাঁচ ও  শৈলী রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাঁচমুড়ার  ঘোড়াগুলিকে চারটি ধাঁচের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম  বলে মনে করা হয়। বাঁকুড়ার ঘোড়া এক  ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়াও বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী উট , হাতি , গনেশ ,  নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত মূর্তি তৈরী করে  টেরাকোটা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।  রাঢ় অঞ্চলে স্থানীয় লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজায় টেরাকোটা ও কাঠের ঘোড়া ব্যবহৃত হয়। অনেক গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে গ্রামবাসীরা ঘোড়া মা...

আমার ছড়া

      ।। সধবার একাদশী ।।                                    কাবলিওয়ালার ব‌উ দেখিনি পাঞ্জাবীদের টাক দেখিনি বোরখা পরে তোলা সেলফি দেখিনি নাঙ্গা বাবার  কাপড়জামা দেখিনি। গুজরাটেতে মদ চলেনা অরুনাচলে মদের নিষেধ চলেনা নৈনীতালে ফ‍্যান চলেনা লে লাদাকে রেল চলেনা। আইসক্রীমে বরফ নেই শ‍্যাওড়া গাছে পেত্নী নেই কৃষ্ণনগরে কৃষ্ণ নেই আজ লাইফ আছে জীবন নেই।                      ।। রসগোল্লা ।।                             পান্তোয়া সন্দেশ যতকিছু আনোনা বাংলার রসগোল্লা তার নেই তুলনা। নানাভাবে তোলপাড় কতকিছু ঝামেলা নবীনের নব আবিষ্কার নাম রসগোল্লা। আসল ছানার গোল্লা সে...