Skip to main content

অভিটের আড়ালে

।।অডিটের আড়ালে।।
চ্যাটার্ড আ্যকাউটেন্সি পড়তে গিয়ে আর্টিকল থাকার সময় অনেকর মতো আমারও স্কুল অডিট করার সৌভাগ্য হয়েছিল। হয়তো বা আমার কাছে সুযোগটা একটু বেশী মাত্রাতেই এসেছিল। এক একটা স্কুলের এক এক রকম পরিবেশ তাদের মধ্যে গিয়ে অডিটর হিসেবে খবরদারি করা তার অনুভুতিটাই একদম অন্যরকম। খুবই খাতির যত্ন পাওয়া গেলেও অসুবিধে বিপদ আপদ নেহাতই কম ছিলনা। কোন স্কুলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে  ছয় সাত কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে আবার কোথাও কোন  স্কুলে হেডমাষ্টার আর সেক্রেটারীর ঝগড়ার মুখে পড়েছি আর সেখান থেকে বেড়িয়ে অন্য স্কুলের জন্য রওনা দিয়েছি। তখনকার দিনে ফোনের এত প্রচলন বা সুযোগ সুবিধা কোনটাই ছিলনা তাই সেখানেও না বলে যাওয়ায় আবার কোন অসুবিধের সামনে পড়া এই রকম নানা ঘটনার সামনে পড়তে হতো। বয়স তখন কম ছিল এইসব রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো ভালই উপভোগ করতাম।

আমডাঙ্গা গার্ল্স স্কুলে অডিট করতে গেছি সঙ্গে আমার কালিগ তপন। স্কুলেই লাইব্রেরী রুমে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। হেড মিস্ট্রেস খুব জাঁদরেল মহিলা স্কুল কম্পাউন্ডের মধ্যেই তাঁর কোয়ার্টারে থাকেন। অবিবাহিতা সঙ্গে এক যুবতী সবসময় থাকে ও তাঁর দেখাশোনা করে। হেড মিস্ট্রেস ,বেলা সরকার , একবার নিজে এসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা দেখে গেলেন। যাইহোক রাত্রে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে দুজনায় শুয়ে পড়েছি, কাল থেকে কাজ শুরু হবে। কিছুক্ষণ পর লোডশেডিং, পাখা বন্ধ হয়ে গেছে গরমে ঘুমের অসুবিধে হচ্ছে। এইভাবেই কিছুক্ষণ কাটানোর পর হঠাৎ দরজায় টোকা মারার শব্দ। ধীরে ধীরে সেই শব্দ বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়ে শঙ্কার সঙ্গে দরজা খুলে আলো আঁধারির মাঝে দেখি একজন যুবতি মেয়ে । এই বয়সে যা হয় সঙ্গে সঙ্গে অনেকরকম চিন্তা মাথায় এসে গেল। ‘কি ব্যাপার কে তুমি, এত রাতে এখানে কেন?’ মেয়েটি আমতা আমতা করতে থাকে ‘না মানে...’ আমি আবার জানতে চাই ‘কি ব্যাপার খুলে বলো’। মেয়েটি এবার উত্তর দেয় ‘ বেলাদির খুব শরীর খারাপ , বুক ধড়ফড় করছে তাই আপনাদের ডাকতে বললেন, শিগ্রী চলুন’। ‘তাই বলো, আমি ভাবছি....’, ততক্ষণে তপনও উঠে পড়েছে ওকে নিয়েই বেলাদির ঘরে গিয়ে দেখি বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় বুকের কাপড় অবিন্যস্ত। বুকে হাত বোলাতে বোলাতে বলছেন আমি বোধহয় আর বাঁচবো না আপনারা কাল চলে যান,বুকে খুব ব্যাথা। আকস্মিক এই ব্যাপারটায় আমরাও ঘাবড়ে যাচ্ছি।
 ‘একজন ডাক্তার কিংবা আপনাদের সেক্রেটারীকে খবর দেব’
 ‘ডাক্তার কোথায় সেতো অনেক দুর,এতোরাত্রি আপনারা বরং সেক্রেটারীকে খবর দিন,দেখুন আসে কিনা।‘

সেক্রেটারীর বাড়ীর ঠিকানা নিয়ে দুই নব্য অডিটর অভিযানে বেরোলাম। অন্ধকার রাস্তা নতুন অপরিচিত জায়গা ঠিক ঠাওর করতে পারছিনা। এই পরিস্থিতিতেও বলতে ইচ্ছে হল আমাদের ভাগ্য নেহাতই সুপ্রসন্ন, একজন লোক সাইকেল করে আসছিলো তাকেই জিজ্ঞেস করায় আমাদের নিয়ে গিয়ে বাড়ীটা দেখিয়ে চলে গেল। মিনিট পাঁচ সাত গেটে ধাক্কা দিয়ে ও নাম ধরে ডেকে সাড়া পেলাম। সবিস্তারে সব কিছু বলার পর দেখি নিজে খুব অপ্রস্তুত হয়ে বললেন ‘দেখুন দেখি কান্ড আপনারা গণ্যমান্য ব্যক্তি, অতিথি কি অবস্থা।’
‘তাতে কি বিপদের সময় এটুকুতো করতেই হয়।‘ তাড়াতাড়ি তিনজনে বেলাদির কাছে ফিরে এলাম। এবার ওনাকে আর অতোটা খারাপ মনে হলোনা।  সেক্রেটারীবাবুই জানতে চাইলেন কি হলো এখন কেমন আছেন? বেলাদি আস্তে আস্তে জবাব দিলেন ‘মনে হচ্ছে একটু ভালো, একবার বমি হয়ে শরীরটা অনেক হাল্কা লাগছে আর বুকে ব্যাথাও নেই।‘ সেক্রেটারীবাবু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, আমরাও স্বস্তি পেলাম। আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে উনি একাই বাড়ী ফিরলেন আর আমরা দুজনে শুতে এলাম। পরদিন সকালে দেখি কাজের মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে বেলাদি আমাদের জন্য চা নিয়ে এসেছেন। কালকের রাত্রির ঘটনা নিয়ে কুন্ঠা দেখিয়েও গেলেন।

এইরকম ছোটখাটো ঘটনার স্মৃতিগুলো মাঝেমধ্যে মনে পড়লে বেশ মজাই লাগে। তবে ঐ ছোটখাটো ঘটনার মধ্যে সীমবদ্ধ থাকলেই ভালো। কিন্তু তাতো আর হবার নয়, বড় কিছু যখন ঘটবে কোনরকম জানান না দিয়েই আসবে। প্রসব কালের ব্যাথা যতই সাবধানি হও আর  আগে থেকে কাঁথা কানি কেচে রাখো সময় কালে কোন কাজে লাগবে কিনা কেউ জানেনা। 

ঐ অডিটের কাজে প্রায়ই আমায় বাইরে যেতে হতো।একটা অ্যাটাচী কেসে এক দুদিনের জামাকাপড় আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষ প্রায় রেডি করাই থাকতো। একবার মেদিনীপুরের একটু ভেতরে গোবিন্দগঢ় বলে একটা জায়গা আছে তারই একটু দুরে একটা কারখানায় স্টক ভেরিফিকেশনের কাজে যেতে হয়েছিল। সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়গা। কোম্পানীর তরফ থেকে শুধু এইটুকু জানা ছিলো কাছাকাছি একটা ছোট্ট রেল স্টেশন আছে নাম গোবিন্দগঢ়। কাজেই সব ট্রেন সেখানে থামেওনা। ঐ স্টেশন থেকে  আট দশ কিলোমিটার হবে। বাস সার্ভিস আছে দিনে দুবার। এছাড়া আর বিশেষ কিছু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, সে চেষ্টা না করাই ভালো। আমিও তাই আর বিশেষ কিছু না ভেবে ঐ গোবিন্দগঢ় স্টেশনে একটা টিকিট কেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর অন্যান্য টুকিটাকি জিনিষ নিয়ে জয় দূর্গা বলে চেপে বসলাম। নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী গোবিন্দগঢ় স্টেশনে পৌঁছতে দুপুর দেড়টা দুটো হবে তারপর বাসে অতটা রাস্তা পেরিয়ে কারখানায় যাওয়া দিনের বেলাতে অফিস টাইম থাকতে থাকতেই নিশ্চয় পৌঁছে যাবো। ট্রেন ছাড়ার পরেই পাশের যাত্রী জানতে চাইল কতদুর যাবো , বাধ্য হয়েই বললাম ‘গোবিন্দগঢ়’। ‘ও আমি তারও পরে আরও চার পাঁচটা  স্টেশনের পর, কোন চিন্তা নেই ভালো করে গুছিয়ে বসুন।‘ এমনিতেই ট্রেনে যাতায়াতের সময় পাশের লোকের সঙ্গে বেশী বকবক  করা আমার পছন্দের বাইরে তাই একটা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিয়েছি ওটা পড়তে পড়তে সময় কেটে যাবে। এই ম্যাগাজিন গুলোও এক বিচিত্র মানের হয়ে যাচ্ছে। মোটামুটি সব শ্রেণীর পাঠকদের ধরে রাখার জন্যে একটা ভ্রমন কাহিনী, একটা প্রেমের কাহিনী, একটা কিশোর কাহিনী, একটা ভুতের কাহিনী, রাশীফল ও একটা ধারবাহিক উপন্যাস এই সব থাকবেই। তবুও এটা নিয়ে বসলে সময় কেটে যায়।

ট্রেনটা বেশ তার স্বাভাবিক গতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল । প্যাসেঞ্জারের নানারকম বিষয় নিয়ে বকবকানি আর ফেরিওলার আওয়াজে ট্রেনটা গমগম করছিল। ঘন্টা খানেক যাওয়ার পর কোন একটা স্টেশনের আগে দাঁড়িয়ে গেল । বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল ট্রেন ছাড়ার নাম গন্ধ নেই । কিছু লোক খবর নিয়ে এল ছাড়তে দেরী হবে ইঞ্জিন খারাপ আর একটা ইঞ্জিন আসবে তারপর ছাড়বে। কথায় আছে যেখানে ভুতের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। অজানা অচেনা জায়গায় যাচ্ছি কোথার সময়মতো পৌঁছতে হবে আর কিনা এই বিপত্তি। কোন উপায় না দেখে ম্যাগাজিনটাই ওলটাতে শুরু করলাম। ভুতের গল্পই বেশী আকর্ষনীয়, যে কোন বয়সের কাছেই সমানভাবে লোভনীয়। ওটাই পড়তে শুরু করলাম সময়টাতো কেটে যাবে। কিন্তু ঐ একটা রোগ কিছুটা পড়ার পরেই চোখের পাতা লেগে আসে আর আমি জোর করে খোলার চেষ্টা করি। এই টাগ অফ ওয়ার চলতেই থাকে।

যথারীতি দেরী করতে করতে গোবিন্দগঢ় স্টেশনে ট্রেন যখন এসে পৌঁছাল তখন বেলা  পাঁচটা পেরিয়ে গেছে। তার ওপর আকাশ কালো করে একরাশ মেঘ, ঝিমঝিম করে বৃষ্টি পড়ছে যেকোন সময় আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি শুরু হবে। কোনরকমে  প্ল্যাটফর্মে  একটা চায়ের গুমটিতে আশ্রয় নিলাম। ছোট্ট স্টেশন শুনশান প্ল্যাটফর্ম তার ওপর এইরকম আবহাওয়া,  দু তিনজনের ইতস্ততঃ ঘোরাঘুরি ছাড়া কাউকে নজরে পড়ছেনা। ট্রেন থেকেও গুটি কয়েক মাত্র লোক নামল, উঠতে কাউকে দেখেছি বলে মনে হচ্ছেনা। একেবারে নিঝুম পরিবেশ। কি করবো ভাবছি হঠাৎই বিকট শব্দ করে মেঘ ডেকে উঠলো, কাছাকাছি কোথাও বাজ পড়ার শব্দ। চায়ের দোকানের মালিক বলে উঠলো,
‘ভেতরে আসুন দেখছেন না বাজ পড়ছে, বসুন চা খাবেন তো!’
‘দোকানে তো আর কেউ নেই শুধু আমার জন্যে চা করবেন।‘
‘তাতে কি, আসা যাওয়া এতো নিত্য নৈমিত্ত লেগেই আছে, এই গগন কি আজকের লোক। আপনাদের মতো যাত্রীদের চা করে খাওয়ানই তো আমার কাজ। তা কোথায় যাবেন আপনি।‘
‘ কাছেই একটা কারখানা আছে না সেইখানেই যাব, কিছু কাজ আছে। একটা বাস ছিল না, এখন কি আর পাওয়া যাবে। ট্রেনটাও লেট করে দিল তারপর এই রকম আবহাওয়া....’ আগ্রহ নিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
‘ছিলতো বাস, তা সে তিনটের সময় ছেড়ে দিয়েছে।‘ কথা বলার ফাঁকে ছোট্ট কাঁচের গ্লাসে ধুমোর গন্ধওয়ালা চা আর বেকারীর দুটো আধ পোড়া বিস্কুট এগিয়ে দিয়ে বলে 
 ‘আপনারা হলেন কোলকাতার মানুষ কতো ভালো চা খাওয়ার অভ্যেস, তবে এই গগনের  হাতের চাও ফেলনা নয় একবার খেলে অনেকদিন মনে থাকবে।‘ এরই মধ্যে আমার চিন্তা বাড়িয়ে ঝমঝমিয়ে  বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এইরকম পরিবেশে গরম চা ভালোই কাজ দিচ্ছে।
‘ না না চাতো বেশ ভালই, তবে আমি ভাবছি এরপর কি করবো। কি করে কারখানায় যাই বলুনতো? দেখুন না কোনরকম উপায় যদি করতে পারেন।‘
‘এত চিন্তার কি আছে, উপায় তো একটা হবেই।‘
‘ উপায় হয়ে যাবে! দয়া করে কিছু একটা করুন।‘
‘রিক্সায় চেপে যেতে পারবেন? না মানে এই ভর সন্ধ্যা বেলা তার ওপর আকাশের এই অবস্থা। ‘
‘তাতে কি, ঠিক পারবো। দেখুন না রিক্সা যদি পাওয়া যায়। তবে এই বৃষ্টিতে ভিজে যাবে কি?’
‘দুর মশাই ওদের আবার বৃষ্টিতে ভেজা! কিছুই এসে যায়না। দেখুন রিক্সা একখান আছে, খুব ভালো না হলেও কাজ চলে যাবে।‘
চায়ের পয়সা মিটিয়ে দেবার সময় গগনের মুখটা ভালো করে দেখতে পেলাম, কেমন যেন অদ্ভুতুরে একটা রহস্যময় মুখখানা। চা এর স্বাদ ভুলে গেলেও ঐ মুখ সহজে ভুলবোনা। তাড়াতাড়ি রিক্সার খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। হাত তুলে গগন বলল ‘ সাবধানে যাবেন।‘

অন্ধকার আরো ঘনিয়ে এসেছে আর নাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। কিছুটা এগিয়ে  আলো আঁধারির মাঝে রিক্সাটাকে ঠাওর করা গেলেও চালকের মুখ দেখা গেলনা। হুড দেওয়া কালো রঙের রেনকোট জাতীয় কিছু একটা দিয়ে আপাদ মস্তক ঢাকা।
 ‘কি ভাই কারখানা অব্দি যাবে? টাকার জন্য ভেবনা, ঠিক পুষিয়ে দেবো।‘ ইশারা করে আমায় বসতে বললো। তারপর চলতে শুরু করলো।
‘ সত্যি তুমি যে আমার কি উপকার করলে অনেকদিন মনে থাকবে। টাকাটাই সব কিছু নয়, আর এইসব উপকারের দাম টাকা দিয়ে মাপা যায়না।‘

অন্ধকার,  অঝোরে বৃষ্টি ,গা ছমছম করা রাস্তার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছি। নিজের মনোবল বাড়ানোর জন্যে রিক্সাওয়ালার সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলার চেষ্টা করছি। মাঝে বৃষ্টি একটু কমলেও আবার সেই আগের মতোই ঝরে চলেছে আর মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি যার্নীটাকে বেশ রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। এইভাবে আরও বেশ খানিকটা আসার পর একটা বড় গেটের সামনে রিক্সা এসে থামলো। ঠিক সেই মুহূর্তেই আবার বিদ্যুতের ঝলক  তাতেই বুঝলাম  কারখানার গেটই বটে তবে বন্ধ,আশেপাশে কারও কোন উপস্থিতি নজরে পড়লোনা। এর পর ঘাড় ঘুরিয়ে রিক্সাওয়ালা ‘কই নামুন’ বলে যেই মাথার হুডটা তুলে ধরলো, বুকটা ছ‍্যাঁৎ করে উঠল দেখি আস্ত কঙ্কালের মাথা। এই কঙ্কালটাই আমায় এতক্ষণ ধরে নিয়ে এল! চকিতে হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিলো। গলা দিয়ে কোন স্বর বেরোচ্ছেনা। পর মুহূর্তেই আবার বিদ্যুতের ঝলক  তখন এক চেনা মুখ  দাঁত বের করে বলছে ‘ভয় পেলেন নাকি আমি গগন।‘ কয়েকবার ঐ কঙ্কালের মুখ আর গনের মুখ কিছু বলছে । ভয়ে চোখ মুখ পাংশু হয়ে গেছে বেশী কিছু শুনতে না পেলেও রিক্সার মধ্যে পড়ে গিয়ে আমার গোঙানির শব্দটা মনে আছে , ‘ভু ভু ভু ত, গ গ গ গ ন, ভু ভু ভু ত ......’

‘ভু ভু ভু ত, গ গ গ গ ন, ভু ভু ভু ত ......’
‘ও মশাই, কি হলো আপনার শুনতে পাচ্ছেন আপনার কি শরীর খারাপ’ ট্রেনের মধ্যে পাশের সীটে বসে থাকা ভদ্রলোক ও আরও কয়েকজন আমার চোখে মুখে জল দিয়ে আমায় ধাতস্থ করার চেষ্টা করছে।
‘আমি কোথায়, এখনো কি খুব বৃষ্টি হচ্ছে?’
‘বৃষ্টি কোথায় এতো রীতিমতো খটখটে রোদ্দুর, আপনি কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন।‘
সম্বিত ফিরে পেতে কয়েক মিনিট সময় নিলেও ঠিক বুঝতে পারছিনা কি হয়েছিল, জানতে চাইলাম,
‘গোবিন্দগঢ় কি পেরিয়ে গেছি,  আমার যে সেখানে নামার কথা। ট্রেনটা কি ঠিক সমেয়ই চলছে?’
‘আপনি এত উতলা হবেন না, গোবিন্দগঢ় এখনও আরও দুটো স্টেশন বাকি। আধঘন্টা মতো লেট আছে। আপনিতো একটা বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছিলেন। নিশ্চয় কোন দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন তাই এমন গোঙাচ্ছিলেন।‘

খানিক্ষণ চুপ করে থেকে অনেক কৌতূহল নিয়ে জিঙ্গেস করি ‘আচ্ছা আপনি তো এদিকেরই লোক, গোবিন্দগঢ় স্টেশনে নেমেছেন কোনদিন, কিছু অস্বাভাবিক জিনিস
দেখেছেন কোনদিন?’
‘হয়তো নেমেছি তবে সেইভাবে মনে নেই, কেন বলুন তো।‘
‘না তেমন কিছু নয় ,গোবিন্দগঢ় আসছে কি।‘
‘হ্যাঁ এইতো ঢুকছে আপনি নেমে পরুন। ভালো থাকবেন।‘

ট্রেন এসে গোবিন্দগঢ় স্টেশনে দাঁড়ালো। নমস্কার করে নেমে পড়লাম। মিনিট দুয়েক পর ট্রেন ছেড়ে দিল।‘









Comments

Popular posts from this blog

বাঁকুড়ার টেরাকোটা

                                                                বাঁকুড়ার টেরাকোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা  ভারতের শিল্পকর্মের এক বিশেষ স্থান   অধিকার করে আছে।  বাঁকুড়ার  পোড়ামাটির  ঘোড়া ও হাতি নির্মাণের  প্রধান শিল্প  কেন্দ্র গুলি   হল পাঁচমুড়া,  রাজাগ্রাম, সোনামুখী ও হামিরপুর।  প্রত্যেক শিল্পকেন্দ্রের নিজস্ব স্থানীয় ধাঁচ ও  শৈলী রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাঁচমুড়ার  ঘোড়াগুলিকে চারটি ধাঁচের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম  বলে মনে করা হয়। বাঁকুড়ার ঘোড়া এক  ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়াও বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী উট , হাতি , গনেশ ,  নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত মূর্তি তৈরী করে  টেরাকোটা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।  রাঢ় অঞ্চলে স্থানীয় লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজায় টেরাকোটা ও কাঠের ঘোড়া ব্যবহৃত হয়। অনেক গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে গ্রামবাসীরা ঘোড়া মা...

আমার ছড়া

      ।। সধবার একাদশী ।।                                    কাবলিওয়ালার ব‌উ দেখিনি পাঞ্জাবীদের টাক দেখিনি বোরখা পরে তোলা সেলফি দেখিনি নাঙ্গা বাবার  কাপড়জামা দেখিনি। গুজরাটেতে মদ চলেনা অরুনাচলে মদের নিষেধ চলেনা নৈনীতালে ফ‍্যান চলেনা লে লাদাকে রেল চলেনা। আইসক্রীমে বরফ নেই শ‍্যাওড়া গাছে পেত্নী নেই কৃষ্ণনগরে কৃষ্ণ নেই আজ লাইফ আছে জীবন নেই।                      ।। রসগোল্লা ।।                             পান্তোয়া সন্দেশ যতকিছু আনোনা বাংলার রসগোল্লা তার নেই তুলনা। নানাভাবে তোলপাড় কতকিছু ঝামেলা নবীনের নব আবিষ্কার নাম রসগোল্লা। আসল ছানার গোল্লা সে...

অপরাজিতা

অপরাজিতা বহু বৈচিত্রে ভরা অপরাজিতা।  দেবী দূর্গার বিভিন্ন রুপের মধ‍্যে আরও একটি রুপ হল  অপরাজিতা। অপরাজিতা কথার অর্থ অপরাজেয় অর্থাৎ যাকে কেউ পরাজিত করতে পারেনা।   মহর্ষি বেদব‍্যাসের বর্ণনা অনুযায়ী অপরাজিতা দেবীকে আদিকাল থেকেই শ্রেষ্ঠ শক্তিদায়িনী রুপে মান‍্যতা দেওয়া হয়েছে। ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর ছাড়াও অন্যান্য দেবতারা নিয়মিত আরাধনা করেন। বিজয়া দশমী বা দশেহরার সময় শক্তির রুপীনির আর এক প্রতীক হিসেবে কল্পনা করে পুজো করা হয়ে থাকে যাতে জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে যেন জয়ী হ‌ওয়া যায়। অপরাজিতা পুজোর পর সেই লতা হাতে ধারণ করার রীতি অনেক স্থানেই চালু আছে। মানুষের বিশ্বাস এই অপরিজিতা রুপে দেবী দূর্গা সমস্ত অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে ধর্মের পূণঃপ্রতিষ্ঠিত করে। দেবী পূরাণে ও শ্রী শ্রী চন্ডীতে এরকম কাহিনী বর্ণীত হয়েছে।             ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে এই ফুলের আবিষ্কার যার ব‍্যাপ্তি সুদূর আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা পর্যন্ত। ভারতের মোটামুটি সব স্থান ছাড়াও বিদেশে যেমন ইজিপ্ট, সিরিয়া, মেসো...