Skip to main content

মুক্তিযুদ্ধ



মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭১ সাল পূর্ববঙ্গে তখন সবাই উত্তেজনায় টগবগ করছে। একদিকে ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে আর অন্যদিকে মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছে। পূর্ববঙ্গের যুবক যুবতী তথা আবালবৃদ্ধবনীতা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে মুজিবুর ভাষণ দিচ্ছে তোমাদের ঘরে যা আছে তাই দিয়েই লড়বা, দরকার হলে হাতা খুন্তি দিয়ে লড়তে হবে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই আমাদের জিততে হবে। পাকিস্তানের অত্যাচার থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। এ লড়াই স্বাধীনতার লড়াই।

পাকিস্তান যে শুধু পূর্ববঙ্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাতো নয় আমাদের দেশ ভারতের বিরুদ্ধেও সমানে আক্রমন করে চলেছে। মুহুর্মুহু ভারতের সেনার ওপরে গোলাবর্ষণ করছে। সেই আক্রমন প্রতিহত করার জন্য আমাদের বীর জোয়ানরাও প্রস্তুত। যোগ্য জবাব দিয়ে পূর্ববঙ্গকে স্বাধীন করতে সার্বিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধে আহত ও নিহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে । দলে দলে শরনার্থী ভারতের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মুজিবুর রহমানও তখন আত্মগোপন করার জন্য কোলকাতার কোথাও লুকিয়ে আছে। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে চলেছে। আমরা বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা রিতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠছি। নানারকম ফাইটার বিমানে আনাগোনা ও বোমা পড়ার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে আছি। প্রায়ই খবর পাচ্ছি কোলকাতা ও অন্যান্য বিশেষ বিশেষ জায়গায় বোমা পড়ার সম্ভাবনা আছে। 

আমাদের আসানসোল বার্নপুর এলাকায় বড় কারখানার ওপড়ে বোমা পড়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে বসতির মাঝে মাঝে ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয়েছে, কার্ফ্যু জারী করা হয়েছে। সন্ধ্যে হওয়ার আগেই যে যার নিজের ঘরে ঢুকে পড়ছি। রাস্তায় আলোর নাম গন্ধ নাই। বাড়ীর জানালা ঘুলঘুলি গুলো দিয়ে কোনরকম আলো যাতে না বেরোয় সব কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকছে। সমস্ত দিকে ঐ একটাই আলোচনা , এক থমথমে ভাব। যুদ্ধ যতই কঠিন ও বেদনাদায়ক হোক না কেন বেশ রহস্যময় ও রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে।

ছোটবেলা থেকেই আর পাঁচটা ছেলেদের মতো রহস্য  রোমাঞ্চের প্রতি আগ্রহ ছিলো , হয়তো একটু বেশিই হবে। প্রতিমাসেই বাবা কিনে দিতো স্বপনকুমারের ডিটেকটিভ গল্প। দীপক আর তার সহকারী রতনের রোমহর্ষক রোমাঞ্চকর গল্প উদ্বুদ্ধ করে রাখতো।‍ কিন্তু নিজের জীবনে রহস্যের ছোঁয়া লাগছে কই! সরস্বতী পূজো বা কালী পূজোর রাতে কারও গাছ থেকে ফল পাড়া বা কারও বাড়ি থেকে লুকিয়ে মুরগি নিয়ে আসা এইরকম আরও ছোটখাটো ঘটনাগুলোর মধ্যে যেটুকু রহস্যের গন্ধ থাকতো আর তাতেই বুঁদ হয়ে থাকতাম। সেই রকম বড় কোন রহস্য রোমাঞ্চের সাক্ষী থাকা বা জড়িয়ে পড়ার সুযোগ আর আসছিলোনা।  কেমন সব যেন ম্যাড়মেড়ে হয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তানের যুদ্ধ আমাদের সবাইকে নানারকম আতঙ্কের মধ্যে জড়িয়ে রেখেছিল। এই বুঝি বোমা পড়ে, এই বুঝি বড় কিছু ধ্বংস হয়। পুরোদমে যুদ্ধ চলছে। এই সুষোগে কিছু মানুষ আবার নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে চলেছে। কারও পোষ মাস কারও সর্বনাশ। অন্যসময় সুযোগ হয়না পাঁচজন দেখতে পাবে তাই এই আঁধারটাকে কাজে লাগিয়ে তপন বেলাকে নিয়ে প্রায় রোজই একান্তে প্রেম করছে ও আরো অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্ধকারকে হাতিয়ার করে আরো অঘটন চলছে , পাড়ার মধ্যে চুরির উপদ্রব বাড়ছে। প্রায়ই চুরির খবর বেরিয়ে পড়ছে। সকাল হলেই শোনা যাচ্ছে কারও সাইকেল নেই, কারও জামাকাপড় পাওয়া যাচ্ছেনা , কারও রান্নাঘর থেকে বাসনপত্র পাওয়া যাচ্ছেনা এইসব আরও কতো কি।

বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে আলোচনা করছি এভাবে চলতে দেওয়া যায়না। পাড়ায় এতোগুলো জোয়ান ছেলে থাকতে আমরা কিছুই করতে পারবোনা! বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান । সে তো আর চলতে দেওয়া যায়না। অন্ধকারে আড়ালে আবডালে প্রেম বা আগডুম বাগডুম ইত্যাদি মেনে নিলেও চোরকে কিছুতেই সাপোর্ট করা যায়না , চোর যেমন করেই হোক ধরতেই হবে।

এতদিনে জম্পেশ একটা রহস্যের মুখোমুখি হতে চলেছি। আমি, আনন্দ , শঙ্কর, সত্য, হরেষ, মৃনাল, অজিত ও আরও দুএকজন নিয়ে গোপন বৈঠক হলো। ব্যাপারটা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে, নইলে চোরেরা সতর্ক হয়ে যেতে পারে। আমাদের বাড়ি সঙ্গে লাগোয়া একটা ঘর ছিল যেটায় বাইরে দিয়েই আসা যাওয়া হতো। বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে মাঝেমাঝে আড্ডা গল্পগুজব তাস খেলা সেখানেই চলতো। ঠিক  হলো কদিন সারারাত ঐখানে তাস খেলা হবে। পালা করে দুজন লাঠি নিয়ে চোরের চোখ এড়িয়ে পাহাড়া দেবো। চোর এবার ধর পড়বেই। শীতকালের  রাতজাগা ও তারপর ঠান্ডায় ঠান্ডায় রাতের অন্ধকারে পাহাড়া দেওয়া, ঝুঁকিটা একটু বেশিই নেওয়া হচ্ছে। এ নাহলে আর রহস্য রোমাঞ্চের  হলোটা কি। কয়েকটা কম্বল, যতটা সম্ভব কয়েকটা কালো চাদর ও কয়েকটা ভোজপুরী লাঠি জড়ো করা হলো। সবই কিন্তু খুব গোপনে গোপনেই হচ্ছে নইলে রহস্যটাই মাঠে মারা যাবে। ঘরে একটা ইলেকট্রিক হিটার ছিলো চা চিনি আর দুধের ব্যবস্থাও হয়ে গেল। সারারাত ধরে তাস খেলা আর চা খাওয়া। রাত জাগতে হলে চাএর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে।

শুরু হয়ে গেল চোরর খোঁজে   রহস্য অভিযান। এও আরেক মুক্তিযুদ্ধ। প্রথম দিন উৎসাহ অনেক বেশি , উত্তেজনায় টইটুম্বুর। রাত প্রায় বারোটা দরজা একটু ফাঁক করে দেখি চারিদিক নিস্তব্ধ মাঝে মাঝে গাছের পাতা ঝরার খসখস শব্দ আর একদম নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। আমি ও আনন্দ দুটো কালো চাদর মাথা থেকে ভালো করে জড়িয়ে দুটো লাঠি  নিয়ে তৈরী হয়ে জয়মা কালি বলে তৈরী হয়ে বেরোলাম। কার্ফ্যুর রাতে ঘন অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে অতি সন্তর্পনে দুজনে রহস্যের সন্ধানে এগোচ্ছি। কিছু দেখতে না পেলেও চেনা রাস্তা তাই একটু একটু করে এগোচ্ছি। কখনো গাছের আড়ালে কখনো পাঁচিরের ধারে লুকিয়ে লক্ষ করছি শিকারী পাখির মতো। মাঝে আকাশ দিয়ে উড়ে গেল একটা বিমান, যেকোন বিমানকেই এখন বোমারু বিমান বলে মনে হচ্ছে , এই বুঝি বোমা বর্ষণ হবে। এইরকম সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আরেকটা গাছের আড়ালে একটু দাঁড়িয়েছি হঠাৎ ঝটপট করতে করতে আমাদের মাথার উপর দিয়ে ক্যাঁ ক্যাঁ করে শব্দ করে কিছু উড়ে গেলো আতঙ্গে ও ভয়ে দুজনায় দুজনকে আঁকড়ে ধরলাম। ভয়ে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো , কয়েক মুহুর্তের ঘোর কাটিয়ে বুঝলাম ওটা প্যাঁচার উড়ে যাওয়ার শব্দ। ঘন্টা দেড়েক এই ভাবে এই গলি সেই গলি সেরকম বড়ো কোনো সন্ধানের রহস্য না পেয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরলাম।

ফিরে এসেই দুজনায় গরম চা খেয়ে ধাতস্থ হলাম। আমাদের অভিজ্ঞতা শুনে কেউ কেউ আরো উৎসাহী হয়ে উঠলো।  শঙ্কর ও হরেষ একই ভাবে কালো চাদর জড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে প্রস্তুত। ঠাকুর নাম করতে করতে বেড়িয়ে পড়লো। ঘরে ঢুকে চা খেয়ে আমরা তাসে মন দিলাম। এই ভাবেই ঘন্টা খানেক পড়ে শঙ্কররা ফিরে এল। ওদের কাছেও  খুব একটা রোমহর্ষক গল্প শুনতে পেলামনা। বাকি সবাই একে অপরকে আশ্বস্ত করি ‘প্রথমদিনেই কি সফল হয় ! দু একদিন যাক তারপর দেখ কেমন লাগে, সুযোগ আসবেই’। প্রায় ভোর হয়ে এলো আজকের মতো এই পর্যন্তই আবার কাল নতুন উদ্দ্যম নিয়ে নামা যাবে।

সকালে কাউকে কিছু না বলে পাড়ার লোকের কাছ থেকে শুধু প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করছি , না কেউ কিছু জানতে পারেনি। রাতে আবার সেই একই ভাবে রহস্যের সন্ধানে জড়ো হলাম। একইভাবে পালা করে  রহস্যের সন্ধানে ব্যস্ত আছি আর দিনে প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করছি। কারো মুখে কোন খবর না পেলেও নতুন কোন চুরির খবরও পেলামনা। খানিকটা হতদ্যম হয়ে পড়লাম।

এদিকে ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ খুবই চরম আকার ধারণ করেছে। বহু সেনা মারা যাচ্ছে , আহতের সংখ্যাও প্রচুর।পূর্ববঙ্গের সাধারন মানুষের অমানবিক অত্যাচার চলছে। দলে দলে মানুষ ঘরবাড়ি বিষয় আশয় ফেলে পরিবার নিয়ে পশ্চিম বাংলায় এসে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি অনেকটাই এগিয়ে  আছে , জানিনা পাকিস্তান আর কতদিন সামলাতে পারবে।

আমাদের রহস্য তেমন কোন সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছেনা। তেমন জমে উঠছেনা , রহস্যের সন্ধানে যেটা একদম উচিৎ নয় তাই হচ্ছে । ক্রমশ অধৈর্য্য হয়ে উঠছি।  মনে মনে ঠিক করলাম  আজ এসপার ওসপার কিছু একটা করতে হবে। যথারীতি তাস শুরু হয়ে গেছে। রাত প্রায় ১ টা নাগাদ এক রাউন্ড চা খেয়ে  মৃণাল ও অজিতকে বলা হলো ‘তোরা আজ আগে বেড়ো ‘। বেচারা মৃণাল তাসের পাগল , তাস ছেড়ে উঠতেই চায়না। অনেক কষ্টে রাজি হয়ে সেইভাবেই কালো চাদর জড়িয়ে দুজনে দুটো লাঠি নিয়ে জয় ব্যোমকেশ বলে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো। যথারীতি এদিক সেদিক ঘুরে রাত দুটোর সময় দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢুকে ধপাস করে বসে পড়লো। কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করি

          আমিঃ কিরে কি হয়েছে , এতো হাঁপাচ্ছিস কেনো         তোরা ?
মৃণালঃ দাঁড়া দাঁড়া একটু দম নিত দে, বলছি । বেশ কিছুক্ষণ কালো চাদর জড়িয়ে লুকিয়ে  লুকিয়ে যাওয়ার পর পেছন থেকে একটা খসখস শব্দ শুনতে পেলাম। প্রথমে গুরুত্ব দিইনি, শব্দটা আরও কাছে আসতেই ঘাড় ঘুড়িয়ে মনে হ’লো দুটো কুকুর আমাদের পিছু নিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে দুজনায় পড়িমড়ি করে দৌড়ে পালিয়ে এসেছি , কি বাঁচান বেঁচেছি।
শঙ্করঃ শালা বাঁচাচ্ছি তোদের , জলন্ত উনোনে জল ঢেলে দিলি !
আমিঃ ঠিক আছে মাথা গরম কর কোনো লাভ হবেনা। চল শঙ্কর তুই আর আমি এক্ষণই বেরোবো। এবার এই শেষ রাতেই কিছু একটা হবে।
দুজনায় তৈরী হয়ে এগোচ্ছি টহল দিচ্ছি ,  বেশ কিছুক্ষন এভাবে কাটার পর  রাস্তার দিকে এগোতেই দুটো আবছা  ছায়ার মতো কিছু মনে হলো। অন্ধকার থাকলেও বেশ বুঝতে পারছি অশরীরির মতো কিছু একটা এগিয়ে আসছে। ভুত নয়তো ?         শঙ্কর আমাকে  কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো , ওকে সে সুযোগ না দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করতে থাকলাম “ চোর চোর চোর “। শঙ্করও আমার সঙ্গে গলা মিলিয়ে চিৎকার শুরু করলো “চোর চোর চোর “।

চিৎকার শুনে আমাদের রহস্য অনুসন্ধানের দল লাঠি নিয়ে পড়িমড়ি করে হাজির হয়ে তারাও চিৎকার জুড়ে দিলো “ চোর চোর চোর , মার মার“। এইসব চিৎকার শুনে এক এক করে আরও ৪০-৫০ জন লাঠি হাতে  “চোর ধরো পাকড়ো মারো “ বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। বেগতিক দেখে সেই অশরীরি ছায়া দুটো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রাণ বাঁচাবার তাগিদে বলতে শুরু করেছে
‘ওগো আমরা চোর নইগো , আমাদের বাঁচান বাবুরা আমরা চোর নই।’
‘চোর নই বললেই হবে , এতো রাতে এখানে কি করছিস ? ‘

হই হট্টগোলের মাঝে ওরা কি বলতে চাইছে সেদিকে কারও কান নেই । এতো উত্তেজনার মাঝে কার্ফ্যুর কড়াকড়ি তোয়াক্কা না করে দু একজন  বাইরের আলো জালিয়ে দিয়েছে। সেই আলোয় তখন স্পস্ট হলো এরা আমাদের পাড়ার বিশুদা আর তার মাসী। আতঙ্কে লজ্জায় বিশুদা আর মাসী কাপড়ে মুখ ঢেকে থরথর করে কাঁপছে। মারমুখি জনতা একটু শান্ত হয়ে জেরা করতে শুরু করেছে।
                 ‘কিগো বিশু  এতো রাতে তোমরা কি করছিলে?’
‘মাসীকে ট্রেনে তুলে দিতে যাচ্ছিলাম , মাসী টাটানগর যাবে স্টেশন তো কাছেই তাই হেঁটেই যাচ্ছিলাম ‘।

‘সেটা শুরুতে বলে দিলেইতো হতো , ভাগ্যে আলোটা জালিয়েছিলো   নইলে তোমাদের আজ হয়েছিলো ,  একটা লাঠিও নিচে পড়তোনা ।’
‘সে সুযোগ দিলেতো , কে যেন চোর চোর বলে চ্যাঁচাল আর তারপরে সবাই হামড়ি খেয়ে পড়লো।‘

এর বেশী আর দাঁড়িয়ে থাকা উচিৎ হবেনা। এরপর বিশু ও তার মাসীর কি হলো সে আগ্রহ দেখাবার আর সাহস নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমাদের রোমাঞ্চ অনুসন্ধানকারী দল একপা একপা করে পেছন ফিরতে শুরু করলাম।
           আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটে আকাশ আলোকিত হয়ে রাতের অন্ধকার কেটে গেলো। কদিনের মধ্যেই ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে হলো। ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ণ স্বধীনতা অর্জন করে এক নতুন রাস্ট্রের জন্ম যার নাম হলো বাংলাদেশ।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সুরে সবাই গেয়ে উঠলো               

          “ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।
           চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার      প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥“







Comments

Popular posts from this blog

বাঁকুড়ার টেরাকোটা

                                                                বাঁকুড়ার টেরাকোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা  ভারতের শিল্পকর্মের এক বিশেষ স্থান   অধিকার করে আছে।  বাঁকুড়ার  পোড়ামাটির  ঘোড়া ও হাতি নির্মাণের  প্রধান শিল্প  কেন্দ্র গুলি   হল পাঁচমুড়া,  রাজাগ্রাম, সোনামুখী ও হামিরপুর।  প্রত্যেক শিল্পকেন্দ্রের নিজস্ব স্থানীয় ধাঁচ ও  শৈলী রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাঁচমুড়ার  ঘোড়াগুলিকে চারটি ধাঁচের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম  বলে মনে করা হয়। বাঁকুড়ার ঘোড়া এক  ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়াও বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী উট , হাতি , গনেশ ,  নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত মূর্তি তৈরী করে  টেরাকোটা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।  রাঢ় অঞ্চলে স্থানীয় লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজায় টেরাকোটা ও কাঠের ঘোড়া ব্যবহৃত হয়। অনেক গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে গ্রামবাসীরা ঘোড়া মা...

আমার ছড়া

      ।। সধবার একাদশী ।।                                    কাবলিওয়ালার ব‌উ দেখিনি পাঞ্জাবীদের টাক দেখিনি বোরখা পরে তোলা সেলফি দেখিনি নাঙ্গা বাবার  কাপড়জামা দেখিনি। গুজরাটেতে মদ চলেনা অরুনাচলে মদের নিষেধ চলেনা নৈনীতালে ফ‍্যান চলেনা লে লাদাকে রেল চলেনা। আইসক্রীমে বরফ নেই শ‍্যাওড়া গাছে পেত্নী নেই কৃষ্ণনগরে কৃষ্ণ নেই আজ লাইফ আছে জীবন নেই।                      ।। রসগোল্লা ।।                             পান্তোয়া সন্দেশ যতকিছু আনোনা বাংলার রসগোল্লা তার নেই তুলনা। নানাভাবে তোলপাড় কতকিছু ঝামেলা নবীনের নব আবিষ্কার নাম রসগোল্লা। আসল ছানার গোল্লা সে...

অপরাজিতা

অপরাজিতা বহু বৈচিত্রে ভরা অপরাজিতা।  দেবী দূর্গার বিভিন্ন রুপের মধ‍্যে আরও একটি রুপ হল  অপরাজিতা। অপরাজিতা কথার অর্থ অপরাজেয় অর্থাৎ যাকে কেউ পরাজিত করতে পারেনা।   মহর্ষি বেদব‍্যাসের বর্ণনা অনুযায়ী অপরাজিতা দেবীকে আদিকাল থেকেই শ্রেষ্ঠ শক্তিদায়িনী রুপে মান‍্যতা দেওয়া হয়েছে। ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর ছাড়াও অন্যান্য দেবতারা নিয়মিত আরাধনা করেন। বিজয়া দশমী বা দশেহরার সময় শক্তির রুপীনির আর এক প্রতীক হিসেবে কল্পনা করে পুজো করা হয়ে থাকে যাতে জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে যেন জয়ী হ‌ওয়া যায়। অপরাজিতা পুজোর পর সেই লতা হাতে ধারণ করার রীতি অনেক স্থানেই চালু আছে। মানুষের বিশ্বাস এই অপরিজিতা রুপে দেবী দূর্গা সমস্ত অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে ধর্মের পূণঃপ্রতিষ্ঠিত করে। দেবী পূরাণে ও শ্রী শ্রী চন্ডীতে এরকম কাহিনী বর্ণীত হয়েছে।             ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে এই ফুলের আবিষ্কার যার ব‍্যাপ্তি সুদূর আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা পর্যন্ত। ভারতের মোটামুটি সব স্থান ছাড়াও বিদেশে যেমন ইজিপ্ট, সিরিয়া, মেসো...