হারিয়ে যাওয়া কয়েকটা শব্দ। দিনের আলোয় ভরদুপুরে খুঁজে বেড়াই, অনেক চেষ্টা করি কিন্তু পাইনা। পুরোনো জিনিস একসময় যা খূবই প্রাসঙ্গিক ছিল একে একে সব হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আমরা উন্নত হচ্ছি। শারীরিক পরিশ্রম যতটা সম্ভব কমিয়ে এনে যন্ত্র নির্ভর হয়ে উঠেছি। মা ঠাকুমাদের দেখেছি গাদা গাদা মশলা নিয়ে শীলনোড়ায় নিজেরা বা কাজের লোক লাগিয়ে বাঁটতো। রাশি রাশি ডাল বেঁটে বড়ি দেওয়া হ'তো । সেই শীলে বাঁটার রান্নার স্বাদই আলাদা। এখন এর জায়গা দখল করেছে হয় মিক্সি নয়তো সুপ্রিয়ার কথামত গুড়ো মশলা। না না এখনকার মহিলাদের কাজ বাড়ানোর জন্য তদ্বির নয়। কেউ যেন ভুল না বোঝে।
সেই শীলনোড়া এখন কটা বাঙ্গালীর ঘরেই বা পাওয়া যাবে, যত্তসব বস্তাপচা মানসিকতা। কিছুদিন বাঁটাবাঁটির পর শীলনোড়ায় মসৃণভাব এসে যেতো । আর মোলায়েম ভাবে মশলা বাঁটাই যায়না। মেজপিসি পাঁড়েজিকে বলেন, 'কি পাঁড়েজি শীলনোড়াটার কি হাল হয়েছে, লোক ডেকে কোটাতে পারোনা'!
কোলকাতার রাস্তায় অলিগলিতে ভরদুপুরে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে সেই শব্দটা ভেসে আসতো 'শীল কোটাও, শীল কোটাও....' । জানলার ভেতর থেকে ওদের শব্দ শুনতে পেলেই ভাকতাম , ভেতরে এসে ঝোলা থেকে ছোট্ট একটা ছেনি ও হাতুড়ি নিয়ে শুরু করে দিতো ঠক ঠক ঠকাং ঠক, ঠক ঠক ঠকাং ঠক। অবাক হয়ে দেখতাম নিপুণ হাতে কি সুন্দর কল্কা কেটে শীলননোড়াটা কুটিয়ে দিতো আর ভরসা দিয়ে বলতো 'দেখিয়ে মাইজি একদম নয়া হয়ে গিলো'।
ধীরে ধীরে শীলনোড়ার কাজ কম হতে থাকল। কে আর বোকার মতো এতো খাটে, বাজারে এখন এতো গুড়ো মশলা পাওয়া যায় আনিয়ে নিলেই হলো। আরো দিন এগলো রান্নাঘরে মিক্সি ঢুকে গেলো। শীলনোড়া আজ অপাংতেয়।বিয়ে বাড়ির নিয়ম রক্ষায় দরকারি সেই শীলনোড়া এখন ডেকরেটারের কাছে ভাড়া করে আনতে হয়। সেই সুর করে ' শীল কোটাও....' শব্দটা একটু একটু করে কমতে কমতে কোথায় হারিয়ে গেল। সেই লোকগুলোই বা কোথায় গেলো। সেই স্মৃতি বেদনার আকুলতায় ভারাক্রান্ত হতে হয়। কোলকাতার নিস্তব্ধ দুপুর বলে বোধহয় আর কিছু হয়না। গাড়ি ঘোড়া আর মানুষের চিৎকারে নিস্তব্ধতা কোথাও হারিয়ে গেছে।
সেই 'শীল কোটাও' আর শোনা যায়না।
বাঁকুড়ার টেরাকোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের শিল্পকর্মের এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ঘোড়া ও হাতি নির্মাণের প্রধান শিল্প কেন্দ্র গুলি হল পাঁচমুড়া, রাজাগ্রাম, সোনামুখী ও হামিরপুর। প্রত্যেক শিল্পকেন্দ্রের নিজস্ব স্থানীয় ধাঁচ ও শৈলী রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাঁচমুড়ার ঘোড়াগুলিকে চারটি ধাঁচের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে মনে করা হয়। বাঁকুড়ার ঘোড়া এক ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়াও বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী উট , হাতি , গনেশ , নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত মূর্তি তৈরী করে টেরাকোটা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। রাঢ় অঞ্চলে স্থানীয় লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজায় টেরাকোটা ও কাঠের ঘোড়া ব্যবহৃত হয়। অনেক গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে গ্রামবাসীরা ঘোড়া মা...
Comments
Post a Comment