Skip to main content

এবার হাসতে হবে


।।দীপক কুমার মজুমদার।।
 =আপন ভোলা=

স্মৃতিরমন চক্রবর্তীনামটা শোনার পরেই আমার পিসতুতো ভাই কার্তিক কেমন যেন নাক কুচকে বলে উঠলো এ আবার কিরকম নাম!আমিও চেপে ধরলাম, কেন রাধারমন হতে পারে, রমনীমোহন হতে পারে, সারদামোহন হতে পারে তাহলে স্মৃতিরমন কি দোষ করলো শুনি।কার্তিক যেন বাধ্য ছেলের মতো মেনেই নিয়ে বললো বেশ তাই হলো, তারপর বলো সেই স্মৃতিবাবু থুরী স্মৃতিরমনের কথা।হ্যাঁ স্মৃতিবাবুই বটে, সে স্মৃতিবাবু বা স্মৃতিরমন যাই হোক তার স্মৃতি নিয়েই যতো সমস্যা।কেন যে তার বাবা মা ছেলের নাম স্মৃতিরমন রেখেছিলেন তার সদুত্তর কেউ পায়নি।
নামের সঙ্গে তার চরিত্রের একদম মিল ছিলনা।কার্তিক বলে উঠলো সে ওরকম অনেকেরই হয়।নারে সে বড় বিচিত্র কাহিনী। এরকম অভিজ্ঞতা খুব কম মানুষেরই ঘটে।নাম স্মৃতিরমন হলেও তার স্মৃতি খুবই দূর্বল এনিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় নানা বিপদে পড়তে হয়েছে।একদিন রাত্রে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরছিলো, জলে কাদায় সব যেন কিরকম গুলিয়ে গেছিলো।নিজের নামটাও বেমালুম ভুলে গিয়ে কোনরকমে বাড়ির গেট পর্যন্ত গিয়ে মনে পরেছে এটাতো স্মৃতিরমনবাবুর বাড়িগেটে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো এটাই কি স্মৃতিরমনবাবুর বাড়ি?ঝড়বৃষ্টি আর আলোআঁধারির মাঝে দোতলার জানলা একটু ফাঁক করে এক ভদ্রমহিলা জবাব দিলেন হ্যাঁ এটা ওনারই বাড়ি তবে উনি এখন বাড়ি নেই, বেরিয়েছেন স্মৃতিরমনবাবু যথারীতি স্মৃতি বিস্মৃত হয়ে ওপরের দিকে না তাকিয়েইআচ্ছা ঠিক আছেবলে চলে গেল
এহেন স্মৃতি বিস্মৃত স্মৃতিরমনবাবুর রোগই হোক বা বালাই হোক, দিনদিন এটা বেড়েই চলছিল।একদিন সকাল বেলা বাড়ির সামনে বেশ ভীড় দেখে গিয়ে দাঁড়ালাম।আশপাশ বিভিন্ন লোকের আলোচনা কানে আসছিল, আমিও ঔৎসুকভাবে একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই উনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো ‘খুবই ভালো মানুষ ছিলেন স্মৃতিরমনবাবু,হঠাৎই আজ সকালে উনি চলে গেলেন’কেন কি হয়েছিল? ‘তেমন কিছুই নয়, ওনারতো ওই একটাই রোগ, ভোলা মন। এটাই কাল হলো।রাত্রে স্বাভাবিক মানুষ নিঃশ্বাষ নিয়েই শুয়েছিলেন কিন্তু সকালে ছাড়তে ভুলে গেছেন, আর তাতেই এই বিপত্তি।অতবড়ো জলজ্যান্ত মানুষটা শেষ পর্য্যন্ত দম আটকেই চলে গেলেন’



=বাস ভ্রমন=

            কার্ত্তিক কিছুদিন আমার সঙ্গে বাসে যাতায়াত করছিল। ওর কাজের জায়গা আমার আফিসের দিকে তাই দুটো স্টপ আগেই নেমে পড়তো।ফেরাটা নিয়মিত না হলেও যাওয়াটা প্রায় নিয়মিত হয়ে গেছিল। এই পথটুকু হাসিমজা করতে করতে চলে যাচ্ছিলাম। ভীড় বাসে ঠেলাঠেলি যেমন করেই হোক লেডিজ সিটের সামনে দাঁড়াতো আর আমাকেও বাধ্য করতো ওর পাশে দাঁড়াতে। বাসে দাঁড়িয়েই কার্ত্তিক নানারকম অঙ্গভঙ্গি শুরু করে দিতো, আমিও বাধ্য হয়ে ওকে মাঝে মাঝে সাথ দিতাম।
            একদিন বোবা সেজে লেডিজ সিটের সামনে দুজন মাঝবয়েসী মহিলার প্রায় ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গি শুরু করেদিলো।কখনো তাদের মাথায় হাত দিচ্ছে, কখনো তাদের ব্যাগধরে টানছে...ঐ মহিলারা একআধটু বিরক্ত হলেও আহা বেচারি বোবা তাই দরদের চোখে ব্যাপারটা নিয়ে হাসাহাসি করছে।এরই মাঝে কার্ত্তিকের স্টপেজ তাড়াহুড়ো করে নেমে জানলা দিয়ে ঐ মহিলাদের উদ্দেশে বললো ‘বোবা বলে কি সাধআল্হাদ থাকতে নেই, আর বোবাদের নিয়ে এইরকম হাসাহাসি করবেননা’বাসের প্যসেন্জার যারা ব্যাপারটা দেখেছিলো তাদের ধাতস্থ হতে কয়েক মুহুর্ত লেগেছিলো তারপর হোহো করে সেকি হাসি।
            আরেকদিনের ঘটনা না বললেই নয়।যথারীতি দুজনায় দৌড়ে বাসে উঠেছি, একটু এগিয়েই বসে থাকা এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সামনে কার্ত্তিক জিঙ্গাসা করে উঠলো ‘কি দাদু কেমন আছো’ ?এমন আন্তরিকতার সঙ্গে প্রশ্ন করায় বৃদ্ধ ভদ্রলোক কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গিয়ে চশমার কাঁচদুটো ধুতির কোনা দিয়ে ভালো করে মুছে আবার চোখে লাগিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো।কার্ত্তিকের আবার প্রশ্ন ‘কি চিনতে পারলেনা, ভালো করে দেখ’বৃদ্ধ ততোধিক কৌতুহল নিয়ে চশমাটা নাকের ওপর একটু ঠেলে বসিয়ে আরও কাছে মুখটা এনে জানতে চাইলো ‘না বাবা চিনতে পারলমনা, কোথায় দেখেছি বলোতো’? কার্ত্তিকের এবার সরাসরি উত্তর ‘দুউউর চিনবেন কিকরে কোনদিন দেখেনইনি’বৃদ্ধ ভদ্রলোক আর সামলাতে না পেরে রাগে কাঁপতে কাঁপতে ‘হতচ্ছাড়া, দাদুর বয়েসি লোকের সঙ্গে মস্করা’বাসের লোকের অট্টহাসি বৃদ্ধকে আরও বেশী তাতিয়ে দিল।



=ডাক্তারি বিদ্যা=

            নিশ্চিন্তপুর গ্রাম।গ্রাম বলতে আমরা যা বুঝি নিশ্চিন্তপুর কিন্তু সেই অর্থে গ্রাম নয়।পাকা রাস্তা, বা্‌স,মোটরগাড়ি, বাজা্‌র, দোকান, স্কুল, বিদ্যুৎ, ডাক্তারখানা এসব সুযোগ সুবিধা নিয়ে নিশ্চিন্তপুর ধীরে ধীরে প্রায় একটা মফস্সল শহর হয়ে উঠেছে। একদিকে যেমন শহরের ছোঁয়া আবার তারই সাথে গ্রামের স্নিগ্ধ সরল পরিবেশের মাঝে সবাই বেশ সুখদুঃখ নিয়ে ভালই ছিল। নিশ্চিন্তপুর আজ আর নিশ্চিন্ত নয়, গ্রামবাসী এক বিচিত্র শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।দিনদিন শঙ্কা বেড়েই চলেছে
            গ্রামের লোকজন, সুযোগ সুবিধা এসব বাড়ার দরকার হয়ে পড়লো মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা। পাশের গ্রামের এক কবিরাজ মশাইকে এখানে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো।ধীরে ধীরে তার পশারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই একজন হোমিওপ্যাথ এসে ডেরা বঁধলো নিশ্চিন্তপুরে।ধীরে ধীরে তারও পশার বেড়ে চললো, গ্রামের লোকজন খুশিতেই আছে।রোগব্যধিতো লেগেই আছে, তার চিকিৎসাও মোটমোটি হচ্ছে, আর দুই ডাক্তার নিজেদের প্রমান করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেকিছুদিন এভাবেই কটছিলো হঠাৎ এক সার্জেনের (শল্য চিকিৎসক) আবির্ভাব হলো নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। ডাক্তারবাবু কোন একদিন তার এক দুর সম্পর্কের বাড়িতে এসেই মনে মনে ঠিক করেছিলেন রিটায়ার্ড করার পর এখানেই পশার করবেন। গ্রামের মাতব্বরেরা ভালোমন্দ বিচার করে এলোপ্যাথি সার্জেনেরও পশারের সুযোগ দিলো।
এভাবে কিছুদসময় সুখে কাটলেও ক্রমে অসুখে পরিণত হতে শুরু হলো। তিনজন ডাক্তারের মধ্যে রেষারেষি বেড়েই চলেছে।চিকিৎসার নামে রোগী ধরে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে।ডাক্তারের কাছে রোগী ধরে আনার জন্য এজেন্ট লাগানো হয়েছে।গ্রামের মানুষজন ক্রমেই ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছে।অসুখ হলেও তারা কেউ ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেনা এমনকি বাড়ির বাইরেও বেরচ্ছেনা। এই অবস্থা বেশী দিন লতে দেওয়া যায়না, তাই গ্রমের মাতব্বরেরা সভা করে তিনজন ডাক্তারকেই ডেকে পাঠালেন।
নির্দ্দিষ্ট দিনে সময়মতো বিচার সভা শুরু হলো।তিনজন ডাক্তারকেই সন্মান জানিয়ে বসিয়ে মাতব্বরেরা বিচার শুরু করলেন। তিনজন ডাক্তারের উদ্দেশে বললেন ‘আপনারা প্রত্যেকেই নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতিতে পারদর্শী, কিন্তু ইদানিং যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই গ্রামবাসীরা খুবই ভীত ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছি তাই ঠিক করেছি যেকোন একজন শ্রেষ্ঠ ডাক্তার এই গ্রামে থাকবেন।আপনারা আপনাদের চিকৎসার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের শোনাবেন, তারই ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্বের বিচার হবে’সবাই এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো।
প্রথমেই কবিরাজ মশাই শুরু করলেনঃ আমি প্রথমদিকে মেদিনিপুরের একটা গ্রামে পোস্টমাষ্টারের চাকরি নিয়ে থাকতাম। চাকরির সাথে সাথে কবরেজিটা চালিয়ে যাচ্ছি।এ বিদ্যাটা যে আমাদের রক্তে, বংশ পরপরম্পরায় এটা রপ্ত করেছি। আসল  লতাপাতা, শেকড়বাকড় আর তার থেকে আসল কবরেজি ওষুধ তৈরী করা একি যার তার কম্ম, এর জন্যে চাই জাত বদ্যি। সে যাই হোক কবরেজ হিসেবে চারিদিকে নাম ভালোই ছড়িয়ে পড়েছে। একদিন সন্ধেবেলায় পোস্টআপিস বন্ধ করে ওষুধ তৈরির কাজ নিয়ে বসেছি হঠাৎ দেখি এক ভদ্রলোক হাঁউহাঁউ করে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আমার দিকে এসে আমার পাদুটো জড়িয়ে ধরে বললো, ‘কবরেজমশাই আমার ছেলেকে বাঁচান,দশদিন হয়ে গেল একমাত্র ছেলে একজ্বরী হয়ে বিছানায় পড়ে আছে সঙ্গে বমি পায়খানা, এখন তখন অবস্থা, আজ তো বড়িতে দুধ গঙ্গাজলের ব্যবস্থা হচ্ছে’সব শুনে জানতে চাইলাম ‘কতদূর যেতে হবে’‘এই পাশের গাঁ’ বলাতে ‘ ডবল ফি লাগবে’ বলে দরকারি ওষুধ নিয়ে ভদ্রলোকের সাথে এগোলামঘন্টা দুয়ক হাঁটার পর ভদ্রলোক বাড়ীর কাছে কান্নার আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে গেল, আমিও ভাবছি ছেলেটা শেষ পর্যন্ত মরে গেল নাকি!তাড়াতাড়ি ভীড় ঠেলে ভেতরে যাওয়ামাত্র দেখি রোগীর জ্ঞান ফিরছে, আস্তে আস্তে উঠে বসছে আর চোখেমুখে সুস্থতার লক্ষণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ভদ্রলোক ও পরিবারকে আশ্বস্থ করে বললাম যান আপনাদের ছেলে ভালো হয়ে গেছে। ‘ম্যাজিক ম্যাজিক,কবরেজমশাই ভগবান’ বলে সবাই আনন্দ করছে। বাধ্য হয়ে বললাম ‘এই হলো আসল কবরেজি ওষুধের গুণ, বাক্সর ভেতর থেকেই কাজ দিয়েছে’
সবাই কেমন হতবাক হয়ে গেল। এরপর গলা খাঁকাড়ি দিয়ে হোমিওপ্যাথের বক্তব্য শুরুআমি একবার হাজারীবাগের কাছাকাছি আমার এক পিসতুতো ভাইয়ের কাছে বেড়াতে গেছি। যেখানেই যাই আমার হোমিওপ্যাথের ওষুধভর্ত্তি বাক্সটা নিয়ে যেতে ভুলিনা। আর কি আশ্চর্য্য কাজে লেগেও যায়। মানুষের বিপদেই যদি কাজে না লাগতে পারলম তাহলে মিছেই ডাক্তারি বিদ্যা। সন্ধেবেলায় বসে গল্প করছি এমনসময় কয়েকজন লোক হাজির তাদের হাতে শক্তপোক্ত লাঠি ও টিমটিমে একটা আলো। এসেই নানারকম ভাবে হিন্দিতে যা বললো তাতে বুঝলাম আমার পিসতুতো ভাইয়ের আপিসের পিয়ন মংলু খবর পেয়েছে আমি ডাক্তার আর ওর স্ত্রী কদিন ধরে পেটের ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, অনেককম ওষুধ পথ্যি করেও কোন কাজ হয়নি। এখন ওরা আামায় রোগী দেখার জন্যে নিয়ে যেতে এসেছে। কথাটা শুনে ভাই বললো ‘সবইতো বুঝলাম তবে এই রাতে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কিকরে যাবে বলতো। নানারম জন্তুজানোয়ার, বড্ড ঝুঁকি হয়ে যাবে’ ‘কুছু ভয় নাই, আমরা এতজন লোক লাঠি হাতে যাব, কোন বিপদ হবেনা’ এই বলে মংলুরা আমাদের সাহস দিল। অগত্যা ওষুধের বাক্স নিয়ে তৈরি হয়ে একটা টমটিমে আলো আর কয়েকটা লাঠির ভরসায় কর্তব্য করতে বেড়িয়ে পড়লাম। খানিকটা পথ এগোনর পরেই ঘন জঙ্গল, টিমটিমে আলোয় গাছমছম করা পরিবেশে, প্রাণটাকে প্রায় হাতে নিয়ে এগিয়ে চলেছি। মংলুরা এটাসেটা বলে সাহস যোগাবার চেষ্টা করছে। হঠাৎই যেন একটু অন্য রকম খসখস শব্দ শুনে ভালো করে পিছনে তাকিয়ে দেখি বিপদ একদম কাছেই। একটা আস্ত কেঁদো বাঘ গুটিগুটি এগোচ্ছে। কাউকে কিছু বলার আগেই ওষুধের বাক্সটা খুলে একটা শিশি থেকে গোটাপাঁচেক গুলি বের করে দিলুম বঘের মুখে ছুঁড়ে, সে বেটাও কপাৎ করে পাঁচটা গুলিই গিলে ফেললো। মাত্র কয়েক সেকেন্ড পর দেখি বাঘ উধাও, আস্ত বাঘটাই হজম হয়ে গেছে শুধু কয়েকটা নক আর লেজের চুলের টুকরো পড়ে আছে। হুঁ হুঁ বাবা এটাই হোমিওপ্যাথি।
সভায় উপস্থিতজনের সে কি হাততালি। এবার এলোপ্যাথ সার্জেনের পালা। বেশ কয়েক বছর আগের কথা, ট্রেনে চেপে কোলকাতা থেকে ফিরছিলাম। গুসকরায় নামবো, তখন ওখানেই এক হেল্থসেন্টারে চাকরি করি। উন্নত পরিসেবা বলতে যা বোঝায় সেসব তেমনকিছুই নেই, তবুও ঐসব নিয়ে চিকৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলাম-পশারও বেশ জমে উঠেছিল। গুসকরা স্টেশনের খানিকটা আগেই ট্রেনটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল।বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় অনেকেই নেমে খোঁজ করছে, তাদেরই কাছে জানতে পারলাম একজন মানুষ কাটা পড়েছে। ডাক্তার হওয়ার কারণে কৌতুহল চেপে না রেখে নিচে গিয়ে দেখি শুধু একজন মানুষ নয় সাথে একটা গরুও কাটা গেছে। লোকটা তখনও বেঁচে আছে, কাটা মানুষ আর কাটা গরু দুটোই ছটপট করছে। ট্রেন ছাড়তে দেরি আছ, এসব কেসে অনেকরকম নিয়ম কানুন তাই রেল কর্তৃপক্ষকে নিজের পরিচয় দিয়ে এক্ষনি আমার হেল্থসেন্টারে নিয়ে যেতে বললাম।স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে একটা গাড়ীতে লোকটাকে শুধু নয় সঙ্গে কাটা গরুটাকেও চাপিয়ে দিল আর আমার অন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করলো। হাসপাতালে পৌঁছে তাড়াতড়ি ওটির মধ্যে দেখি লোকটার কোমর থেকে পা অব্দি অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল, গরুটারও পিছনের পা দুটো খুব ছটফট করছে। সময় নষ্ট না করে অপারেশন শুরু করে দিলাম, দীর্ঘ ছ ঘন্টার ওপর অপারেশনের পর বেরিয়ে এলাম। স্বভাবতই সবারই চোখেমুখে উৎকণ্ঠা, উত্তর দিতেই হোলো, সরি একজনকেই বাঁচাতে পারলাম। তবে পেশেন্ট মানে লোকটি এখন ভালোই আছে কয়েক দিনের মধ্যে একদম সু্স্থ হয়ে উঠবে। লোকটার নিচের দিকটা এতটাই ড্যমেজ ছিল যে কিছু করা গেলনা তাই গরুর নিচের অংশ যেটা ভালো ছিল তার সাথেই জুড়ে দিলাম।গরুটার ওপরের অংশটা প্রায় ডেড্ ছিল তাই ওটা কোন কাজে লাগলোনা।....মাঝেমধ্যেই খবর পাই সুস্থ আছে। এইতো মাস ছয়েক আগে খবর পেয়ছি লোকটা তার পুরনো চাকরি ফিরে পেয়ে মাসে দশ হাজার টাকা রোজগার করছে আর রোজ তিন কেজি করে দুধও দিচ্ছে।
এরপর বিচারের রায় পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হলো।




=গুল কারখানা=

তিন বন্ধুর কথা হচ্ছে।
১ম জনঃ- জানিস এবার মামাবাড়ি গিয়ে দেখলাম কি বিশাল গোয়াল ঘর আর গোয়াল ভর্তি গরু।        সকাল থেকে একে একে বের করতে শুরু করে আর সন্ধ্যে হয়ে গেলেও সব গরুদের রের হওয়া শেষ হয়না।
২য় জনঃ- আমিও মামাবাড়িতে এক নতুন জিনিস দেখলাম। বৃষ্টির জন্যে ওদের কোন চিন্তা নেই। যখনই বৃষ্টির দরকার একটা লম্বা বাঁশ নিয়ে মেঘে খোঁচা দিচ্ছে আর ঝরঝর করে বৃষ্টি।
১ম জনঃ- তাই আবার হয়। অতোবড়ো বাঁশ রাখে কোথায়।                     
২য় জনঃ- কেন তোর মামাবাড়ির গোয়ালে।
৩য় জনঃ- রাজমিস্ত্রী নাখু মুর্শিদাবাদ থেকে মুম্বাইয়ে রাজের কাজ করে। সেকি উঁচু বাড়ি, নিচ থেকে ওপরে দেখতে গেলে মাথার টুপি খুলে যায় আর ঘারে ব্যাথা হয়ে যায়একবার যখন অনেক উঁচুতে কাজ করছিল হঠাৎ হাত ফস্কে কূর্ণীটা পড়ে গেলো। কি আর করা, এমনিতে দুদিন পরে ইদের ছুটিতে বাড়ি আসতো, একদিন আগেই চলে এলো। দিন সাতেক বাদে ফিরে যখন কাজে যাচ্ছে তখন দেখে ঠং করে তার সেই কূর্ণীটা প্রায় মাথার কাছে এসে পড়লো। বোঝ তাহলে কত সময় লাগলো আর কতো উঁচু বাড়ি।

Comments

Popular posts from this blog

বাঁকুড়ার টেরাকোটা

                                                                বাঁকুড়ার টেরাকোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা  ভারতের শিল্পকর্মের এক বিশেষ স্থান   অধিকার করে আছে।  বাঁকুড়ার  পোড়ামাটির  ঘোড়া ও হাতি নির্মাণের  প্রধান শিল্প  কেন্দ্র গুলি   হল পাঁচমুড়া,  রাজাগ্রাম, সোনামুখী ও হামিরপুর।  প্রত্যেক শিল্পকেন্দ্রের নিজস্ব স্থানীয় ধাঁচ ও  শৈলী রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাঁচমুড়ার  ঘোড়াগুলিকে চারটি ধাঁচের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম  বলে মনে করা হয়। বাঁকুড়ার ঘোড়া এক  ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়াও বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী উট , হাতি , গনেশ ,  নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত মূর্তি তৈরী করে  টেরাকোটা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।  রাঢ় অঞ্চলে স্থানীয় লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজায় টেরাকোটা ও কাঠের ঘোড়া ব্যবহৃত হয়। অনেক গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে গ্রামবাসীরা ঘোড়া মা...

আমার ছড়া

      ।। সধবার একাদশী ।।                                    কাবলিওয়ালার ব‌উ দেখিনি পাঞ্জাবীদের টাক দেখিনি বোরখা পরে তোলা সেলফি দেখিনি নাঙ্গা বাবার  কাপড়জামা দেখিনি। গুজরাটেতে মদ চলেনা অরুনাচলে মদের নিষেধ চলেনা নৈনীতালে ফ‍্যান চলেনা লে লাদাকে রেল চলেনা। আইসক্রীমে বরফ নেই শ‍্যাওড়া গাছে পেত্নী নেই কৃষ্ণনগরে কৃষ্ণ নেই আজ লাইফ আছে জীবন নেই।                      ।। রসগোল্লা ।।                             পান্তোয়া সন্দেশ যতকিছু আনোনা বাংলার রসগোল্লা তার নেই তুলনা। নানাভাবে তোলপাড় কতকিছু ঝামেলা নবীনের নব আবিষ্কার নাম রসগোল্লা। আসল ছানার গোল্লা সে...

অপরাজিতা

অপরাজিতা বহু বৈচিত্রে ভরা অপরাজিতা।  দেবী দূর্গার বিভিন্ন রুপের মধ‍্যে আরও একটি রুপ হল  অপরাজিতা। অপরাজিতা কথার অর্থ অপরাজেয় অর্থাৎ যাকে কেউ পরাজিত করতে পারেনা।   মহর্ষি বেদব‍্যাসের বর্ণনা অনুযায়ী অপরাজিতা দেবীকে আদিকাল থেকেই শ্রেষ্ঠ শক্তিদায়িনী রুপে মান‍্যতা দেওয়া হয়েছে। ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর ছাড়াও অন্যান্য দেবতারা নিয়মিত আরাধনা করেন। বিজয়া দশমী বা দশেহরার সময় শক্তির রুপীনির আর এক প্রতীক হিসেবে কল্পনা করে পুজো করা হয়ে থাকে যাতে জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে যেন জয়ী হ‌ওয়া যায়। অপরাজিতা পুজোর পর সেই লতা হাতে ধারণ করার রীতি অনেক স্থানেই চালু আছে। মানুষের বিশ্বাস এই অপরিজিতা রুপে দেবী দূর্গা সমস্ত অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে ধর্মের পূণঃপ্রতিষ্ঠিত করে। দেবী পূরাণে ও শ্রী শ্রী চন্ডীতে এরকম কাহিনী বর্ণীত হয়েছে।             ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে এই ফুলের আবিষ্কার যার ব‍্যাপ্তি সুদূর আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা পর্যন্ত। ভারতের মোটামুটি সব স্থান ছাড়াও বিদেশে যেমন ইজিপ্ট, সিরিয়া, মেসো...