আকালীপুরের কালী
তন্ত্র সাধনার স্থান বীরভূম। যুগে যুগে যেমন বহু তান্ত্রিকের আবির্ভাব হয়েছে তেমনি বহু কৃতী পুরুষেরও জন্ম হয়েছে। মন্ত্র তন্ত্র ও মাকালির উপস্থিতি সারা বীরভূম জুড়েই পাওয়া যায়। রামপুরহাট থেকে ২৫কিমি ও নলহাটী থেকে ৬ কিমি দুরে ভদ্রপুরের পাশে আকালিপুর গ্রাম যেখানে প্রতিষ্ঠত প্রায় ৩০০ বছেরর ঐতিহাসিক দেবী গুহ্যকালিকার মন্দির।
ইতিহাস বিক্ষ্যাত ভদ্রপুরের সন্তান মহারাজ নন্দকুমার ভূভারতে একমাত্র এই অপূর্বশৈলীর অষ্টকোনাকৃতি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।বিক্ষ্যাত এই কালীমূর্ত্তির কাছে কোনো শিবের অবস্থান নেই ও দেবীর অঙ্গে সাপ জড়িয়ে আছে।

কিংবদন্তি অনুসারে সর্পাবরণভূষিতা সর্পাসীনা দ্বিভূজা নৃমুন্ডমালিনী এই মূর্ত্তি পুরাণকথিত মগধরাজ জরাসন্ধের আরাধিতা। কালস্রোতে বাহিতা হয়ে পরবর্তী কালে কাশির রাজা চেতসিংহের প্রাসাদে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পুজিত হতে থাকে। বৃটিশ শাষনকর্তা ওয়ারেন হেসটিংস চেতসিংহের প্রাসাদ লুঠ করার সময় বহু ধনসম্পত্তির সাথে এই মূর্ত্তিটিও লুঠ করে । গঙ্গাযোগে কোলকাতায় আসার পথে তৎকালীন দেওয়ান মহারাজ নন্দকুমার মূর্ত্তিটি উদ্ধার করেন। এরপর ব্রাহ্মণী নদীর তীরে নিজ গ্ৰাম আকালীপুরে এক বটবৃক্ষের (যা আজও বর্তমান) পাশে এই দেবীর প্রতিষ্টা করেন পূজা করার মনস্থ করেন।
জনশ্রুতি অনুযায়ী নন্দকুমারের কূল পুরোহিত এই মন্দির প্রতিষ্ঠায় আপত্তি করেন ও বলেন কোনো গৃহী দ্বারা এই মূর্তির পূজা সম্ভব নয়। একমাত্র কোনো কাপালিক বা তান্ত্রিকই এই অধিকার পেতে

পারেন। মহারাজা এই আপত্তি অগ্ৰাহ্য করে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন কিন্তু দৈবিক কারণেই তা সম্পন্ন হয়নি। মন্দিরের ঈশাণ কোণে বজ্রপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চূড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অতঃপর মহারাজ ১১ই মাঘ ১১৭৮ শকাব্দ মহাসমারোহে এই অসম্পূর্ণ বিশেষ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ওয়ারেন হেসটিঙ্গসকে অপসারণ করে মহারাজ নন্দকুমারকে সেই সময় বীরভূম, বর্ধমান, নদীয়া ও হুগলী এই অঞ্চলের দেওয়ান নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি ব্রিটিশ সরকারের সুনজরে ছিলেন। সেই কাজের সূত্রে ওয়ারেন হেসটিঙ্গসের সাথে অনেক বিষয়ে মনোমালিন্য হয়। তার দ্বারা বিবিধ লুঠতরাজ ও আর্থিক দূর্ণীতির ঘটনা নন্দকুমারের গোচরে আসে। ঐতিহাসিকদের মতে নানা দুস্কর্ম চাপা দেওয়ার জন্যে নন্দকুমারের কাছে চিঠির মারফৎ অর্থের প্রলোভন দেখায়। মহারাজা এই কীর্তিকলাপ সরকারের কাছে অভিযোগ করেন।
পারেন। মহারাজা এই আপত্তি অগ্ৰাহ্য করে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন কিন্তু দৈবিক কারণেই তা সম্পন্ন হয়নি। মন্দিরের ঈশাণ কোণে বজ্রপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চূড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অতঃপর মহারাজ ১১ই মাঘ ১১৭৮ শকাব্দ মহাসমারোহে এই অসম্পূর্ণ বিশেষ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ওয়ারেন হেসটিঙ্গসকে অপসারণ করে মহারাজ নন্দকুমারকে সেই সময় বীরভূম, বর্ধমান, নদীয়া ও হুগলী এই অঞ্চলের দেওয়ান নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি ব্রিটিশ সরকারের সুনজরে ছিলেন। সেই কাজের সূত্রে ওয়ারেন হেসটিঙ্গসের সাথে অনেক বিষয়ে মনোমালিন্য হয়। তার দ্বারা বিবিধ লুঠতরাজ ও আর্থিক দূর্ণীতির ঘটনা নন্দকুমারের গোচরে আসে। ঐতিহাসিকদের মতে নানা দুস্কর্ম চাপা দেওয়ার জন্যে নন্দকুমারের কাছে চিঠির মারফৎ অর্থের প্রলোভন দেখায়। মহারাজা এই কীর্তিকলাপ সরকারের কাছে অভিযোগ করেন।
হেসটিঙ্গস কিন্তু এই ঘটনা প্রবাহ খুব সহজ ভাবে মেনে নেয়নি । মিথ্যা মামলার দায়ে হেসটিংসের চক্রান্তে মহারাজ নন্দকুমার অভিযুক্ত হন। বিচারপতি স্যার এলিজা ইমফে যিনি হেসটিঙ্গসের বাল্যবন্ধু ছিলেন তার সাথে চক্রান্ত করে ফাঁসির আদেশ দেয় এবং এই নৃশংস হত্যা কাহিনীর কথা সকলেই জানেন।
তাঁর অকালমৃত্যুতে মন্দিরের কাজ অসম্পূর্ন হয়ে যায় ও দীর্ঘকাল মন্দিরটি চূড়াবিহীন অবস্হায় ২৩২ বছর পড়ে থাকে। নানারকম প্রবাদ ও সংস্কারের বশবর্তী হয়ে কেউই এই মন্দির সম্পূর্ন করার কাজে এগিয়ে আসেনি। মন্দিরটি ক্রমে জরাজীর্ণ আকার ধারন করতে থাকে। অবশেষে আকালীপুরের আর এক কৃতী সন্তান মায়ের আশির্বাদ ধন্য ৺সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শ্রীমতি মধুমিতা মুখোপাধ্যায়ের আন্তরীক প্রচেষ্টায় ও পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মন্ত্রী কিরণময় নন্দের সাহায্যে এবং মহারাজ নন্দকুমারের উত্তরাধিকারী শ্রী গৌরীশঙ্কর রায়ের সম্মতিতে ২০শে জানুয়ারী ২০০৪ তারিখেএই মন্দিরের অসমাপ্ত চূড়া ও সংস্কারের কাজ সম্পূর্ন হয়।
Comments
Post a Comment