Skip to main content

উটির টানে




              আবার পাহাড়, আবার জঙ্গল, আবার চাবাগান। এবারের গন্তব্য উটি। হায়দ্রাবাদ থেকে সড়ক পরিবহনের মাধ্যমে সোজা উটি। পরিবাহক আমার একমাত্র জামাই তার অতি প্রিয় ডাস্টার (4WD) নিয়ে প্রস্তুত। যাত্রা পথ 860 কিমি।
      রাত 8:20 যাত্রা শুরু নাগাড়ে সারা রাত বেঙ্গালুরু, মাইশোর হয়ে সকাল নটা নাগাদ রাস্তাতেই পড়লো বন্দিপুর টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট মধুমালাই টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট। খুব আগ্ৰহ নিয়ে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেলেও কিছু হরিণ আর সম্বার ছাড়া নজরে অন্যকিছু পড়েনি। অবশ্য ভেতরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিলনা।
 যাইহোক জঙ্গল ছাড়িয়ে আধঘন্টা পরেই 
শুরু হলো উৎরাই, 36 হেয়ার পিন ভেঙ্গে 
উপরে উঠে উটি। চারিদিকের ঘন পাইন , ওক আর ঝাউএর মন মাতানো জঙ্গল উটিকে প্রকৃতি সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছে। এছাড়া অবশ্যই আছে থাকে থাকে সাজানো সবুজে মোড়ানো চাবাগানের পাহাড়।
      
  প্রথম দিন দুপুরে যাওয়া হলো আভালানঞ্চ  স্যাঙচুয়ারী, আভালান্ঞ্চ লেক, আম্মান মন্দির, কলিফ্লাওয়ার হিলস ইত্যাদি। গভর্নমেন্ট জীপ ভাড়া করে ভেতরে ঢুকতে হয়। স্যাঙচুয়ারী আমাদের নিরাশ করলেও কলিফ্লাওয়ার হিলস ভালো লাগলো ঠিক যেন বড় ফুলকফি দিয়ে সাজানো এক পাহাড়। লেকের সৌন্দর্য্যতা উল্লেখযোগ্য।


ভারতের  ম্যাপের আকার নেওয়া এই লেকের শোভা আর তারই ধারে সবুজ চা বাগানের পাহাড়  সত্যি দর্শনীয়।ছোটবড় সব পাহাড়ের গায়ে যেন দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ রঙের গালিচা বেছান, চোখ ফেরানো দায়। এছাড়াও পাহাড়ের গায়ে সবুজে সাজানো নানারকম সব্জির শোভাও কম নয়।

         পরদিন সকাল সকাল বেড়িয়ে পরলাম। উটি থেকে 25 কিমি দুরে কুন্নুরের চাবাগানের সৌন্দর্য্যতা আর বেশিকরে মন মাতিয়ে দেয়। Pregnent lady hills, Dolphin nose point , Catherine falls, Singara Tea Estate খুবই সুন্দর দর্শনীয় স্থান। সবুজ চা বাগান আর ঘন জঙ্গলের প্রাকৃতিক শোভা বর্ননা করা বেশ কঠিন। এরপর 8000 ফুট ওপরে ডোড্ডবেটা টি ফ্যাক্টরী দর্শন। 






সবুজ চা পাতা থেকে ধাপে ধাপে কিভাবে চা তৈরি হয়ে ্যাকেজিং বিক্রি এবং এককাপ গরম চাএর আস্বাদন সব বিরল অভিঙ্গতা। এছাড়াও আছে  হ্যান্ডমেড চকোলেটের বিপণী। এরপর তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে ছুটলাম Rose Garden (গোলাপ বাগ) প্রায় তিন হাজার প্রজাতির গোলাপ দিয়ে সাজানো ভারতের সর্ববৃহৎ গোলাপ বাগ। ফুলের গন্ধ চারপাশে মৌ মৌ করছে। বেশী সময় না দিয়ে ছুটলাম উটি লেক, কিন্তু অসময় হয়ে যাওয়ায় ভেতরে ঢোকা যায়নি।



      পরদিন ফেরার পালা, অনেক কিছু না দেখা থেকে গেল। তাই সকাল 7টার ধ্যে বেড়িয়ে ফেরার রাস্তায় পাইন ফরেস্ট, ঘন সুউচ্চ পাইন জঙ্গল দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা মোহময় করে তোলে। তারপর পাইকারা লেক, অনেক্ষণ সময় কাটালাম এখানে। বোটিং এর সুব্যবস্থা আছে এখানে।







জল খাবারের পর আবার যাত্রা শুরু। মধুমালাই বন্দিপুর টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতর দিয়ে সাঁই সাঁই করে গাড়ী চেপে পৌঁছলাম ঐতিহাসিক মহীশুর প্যালেস। তাজমহলের পরেই এই প্রাসাদের খ্যাতি সারা পৃথিবীতে। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি দেখে এবার সত্যিই ফেরার পালা। বেঙ্গালুরুর পাশ দিয়ে যখন পেরচ্ছি সময় রাত 8টা, এখনো প্রায় 9 ঘন্টা নাগাড়ে গাড়ি ছুটিয়ে হায়দ্রাবাদে বাড়িতে যখন থামলাম তখন রাত 4টা।

Comments

Popular posts from this blog

বাঁকুড়ার টেরাকোটা

                                                                বাঁকুড়ার টেরাকোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা  ভারতের শিল্পকর্মের এক বিশেষ স্থান   অধিকার করে আছে।  বাঁকুড়ার  পোড়ামাটির  ঘোড়া ও হাতি নির্মাণের  প্রধান শিল্প  কেন্দ্র গুলি   হল পাঁচমুড়া,  রাজাগ্রাম, সোনামুখী ও হামিরপুর।  প্রত্যেক শিল্পকেন্দ্রের নিজস্ব স্থানীয় ধাঁচ ও  শৈলী রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাঁচমুড়ার  ঘোড়াগুলিকে চারটি ধাঁচের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম  বলে মনে করা হয়। বাঁকুড়ার ঘোড়া এক  ধরনের পোড়ামাটির ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়াও বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী উট , হাতি , গনেশ ,  নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যরত মূর্তি তৈরী করে  টেরাকোটা আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।  রাঢ় অঞ্চলে স্থানীয় লৌকিক দেবতা ধর্মঠাকুরের পূজায় টেরাকোটা ও কাঠের ঘোড়া ব্যবহৃত হয়। অনেক গ্রামে বিভিন্ন দেবদেবীর কাছে গ্রামবাসীরা ঘোড়া মা...

আমার ছড়া

      ।। সধবার একাদশী ।।                                    কাবলিওয়ালার ব‌উ দেখিনি পাঞ্জাবীদের টাক দেখিনি বোরখা পরে তোলা সেলফি দেখিনি নাঙ্গা বাবার  কাপড়জামা দেখিনি। গুজরাটেতে মদ চলেনা অরুনাচলে মদের নিষেধ চলেনা নৈনীতালে ফ‍্যান চলেনা লে লাদাকে রেল চলেনা। আইসক্রীমে বরফ নেই শ‍্যাওড়া গাছে পেত্নী নেই কৃষ্ণনগরে কৃষ্ণ নেই আজ লাইফ আছে জীবন নেই।                      ।। রসগোল্লা ।।                             পান্তোয়া সন্দেশ যতকিছু আনোনা বাংলার রসগোল্লা তার নেই তুলনা। নানাভাবে তোলপাড় কতকিছু ঝামেলা নবীনের নব আবিষ্কার নাম রসগোল্লা। আসল ছানার গোল্লা সে...

অপরাজিতা

অপরাজিতা বহু বৈচিত্রে ভরা অপরাজিতা।  দেবী দূর্গার বিভিন্ন রুপের মধ‍্যে আরও একটি রুপ হল  অপরাজিতা। অপরাজিতা কথার অর্থ অপরাজেয় অর্থাৎ যাকে কেউ পরাজিত করতে পারেনা।   মহর্ষি বেদব‍্যাসের বর্ণনা অনুযায়ী অপরাজিতা দেবীকে আদিকাল থেকেই শ্রেষ্ঠ শক্তিদায়িনী রুপে মান‍্যতা দেওয়া হয়েছে। ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর ছাড়াও অন্যান্য দেবতারা নিয়মিত আরাধনা করেন। বিজয়া দশমী বা দশেহরার সময় শক্তির রুপীনির আর এক প্রতীক হিসেবে কল্পনা করে পুজো করা হয়ে থাকে যাতে জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে যেন জয়ী হ‌ওয়া যায়। অপরাজিতা পুজোর পর সেই লতা হাতে ধারণ করার রীতি অনেক স্থানেই চালু আছে। মানুষের বিশ্বাস এই অপরিজিতা রুপে দেবী দূর্গা সমস্ত অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে ধর্মের পূণঃপ্রতিষ্ঠিত করে। দেবী পূরাণে ও শ্রী শ্রী চন্ডীতে এরকম কাহিনী বর্ণীত হয়েছে।             ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে এই ফুলের আবিষ্কার যার ব‍্যাপ্তি সুদূর আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা পর্যন্ত। ভারতের মোটামুটি সব স্থান ছাড়াও বিদেশে যেমন ইজিপ্ট, সিরিয়া, মেসো...